উড়োজাহাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত জেট ফুয়েলের দাম গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১২ দফা দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ডিজেল-কেরোসিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জেট ফুয়েলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ৭৭ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে এভিয়েশন খাতে ক্ষোভ ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তবে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানো নিয়ে ভুক্তভোগী এয়ারলাইন্সগুলো ছাড়া আর কেউ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। অথচ জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের বোঝা যাত্রীকেই বহন করতে হচ্ছে। ফলে ইতিমধ্যেই উড়োজাহাজের টিকেট প্রতি ১শ’ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। আর আকাশযাত্রীরা বাস-মিনিবাসের তুলনায় কিছুটা স্বচ্ছল হওয়ায় ১শ’ টাকার বাড়তি দামকে খুব বেশি বোঝা মনে করেনি। সেজন্য ক্ষোভ ও প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। আর দেশবাসী জেট ফুয়েলের দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ জানতে পারেনি। এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর ফলে পরিবহনে তার প্রভাব পড়ায় দেশজুড়েই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ চোখে পড়েছে। কিন্তু গত এক বছর ধরেই প্রায় প্রতি মাসেই একটু একটু করে জেট ফুয়েলের বাড়ানো হচ্ছে। তার আগে গত বছরের অক্টোবরে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৪৬ টাকা। এবার এক ধাক্কায় হয়ে গেছে ৭ টাকা। গত এক বছরের ব্যবধানে জেট ফুয়েলের প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ৩১ টাকা বা ৬৭ শতাংশ। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) অত্যন্ত সুক্ষ্ম কৌশলে এবার জেট ফুয়েলের দাম বাড়িয়েছে। ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর বৈঠকেই জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানোর সিদ্বান্ত নেয়া হয়। কিন্তু তা দুদিন পর জারি করা হয় দুদিন পর এবং ওই রাত থেকেই তা কার্যকর করা হয়। ফলে সব শেষ নবেম্বর মাসে ওই জ্বালানির দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি লিটার ৭৭ টাকা।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন পদ্মা অয়েল দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে জেট ফুয়েলের যোগানদাতা। গত বছরের অক্টোবরে জেট ফুয়েলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ৪৬ টাকা। ডিসেম্বরে ২ টাকা বাড়িয়ে তা ৪৮ টাকা করা হয়। পদ্মা অয়েল এ বছরের জানুয়ারিতে প্রতি লিটার জেট ফুয়েল ৫৩ টাকায় সরবরাহ করেছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে দাম বাড়িয়ে করা হয় লিটারপ্রতি ৫৫ টাকা, মার্চে ৬০ টাকা ও এপ্রিলে ৬১ টাকা। তবে মে মাসে এক টাকা কমে প্রতিলিটার জেট ফুয়েল ৬০ টাকায় উড়োজাহাজগুলোকে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু জুনে আবারো দাম বেড়ে হয় ৬৩ টাকা, জুলাই মাসে ৬৬ টাকা, আগস্ট মাসে ৬৭ টাকা এবং অক্টোবরে দাম হয় ৭০ টাকা। নবেম্বর মাস থেকে প্রতিলিটার জেট ফুয়েল ৭৭ টাকায় এয়ারলাইন্সগুলোকে সরবরাহ করছে পদ্মা অয়েল। এভাবে ঘন ঘন জেট ফুয়েলের দাম বাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো এভিয়েশন খাত। তাতে বাজার বিদেশী এয়ারলাইন্সের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জানান, এমনিতেই এভিয়েশন খাত করোনায় বিপর্যস্ত। গত দেড় বছর ধরেই এ খাতে রক্তক্ষরণ চলছে। এই সময় অন্য দেশগুলো যেখানে এয়ারলাইন্সকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, সেখানে দেশে বারবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর তার প্রভাব যে যাত্রীদের ওপরেই পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিমানের মহাব্যবস্থাপক সালাহ্্ উদ্দিন জানান, জেট ফুয়েলের দাম বাড়লেও বিমান ভাড়া আগের মতোই রয়েছে। শিগগিরই বাড়ানোর কোন সম্ভাবনাও নেই। যদিও তেলের দাম বাড়লে এভিয়েশনে টিকিটের দাম বাড়ানোটাই বাধ্যতামূলক। কারণ যে কোন রুটের পরিচালন ব্যয়ের ৪০ ভাগই হচ্ছে জ্বালানি ব্যয়। আর তা যদি গত এক বছরে ৬৭ শতাংশেরও বেশি বেড়ে থাকে তাহলে ভাড়া থেকেই তা সমন্বয় করতে হবে। তাতে যাত্রীদের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে।