করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে নির্ধারিত সময়ের সাড়ে আট মাস পর শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা৷ এবারের পরীক্ষায় সারাদেশে মোট ২৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী নয়টি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন৷
সূত্র জানায়, রোববার সকাল ১০টায় পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এবারের বিলম্বিত এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে বিজ্ঞান বিভাগের ৫ লাখ ৬ হাজার ৮৩১ জন শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। সবমিলিয়ে এবার এসএসসিতে পরীক্ষার্থী ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন; সারা দেশে ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা হচ্ছে।
জানা যায়, এবার এসএসসি ও এইচএসসি উভয় ক্ষেত্রেই গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে। অর্থাৎ এইচএসসিতে যদি কোনো শিক্ষার্থীর নৈর্বাচনিক বিষয় পদার্থ, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত থাকে, তাহলে তাকে এই তিন বিষয়ের ছয়টি পত্রে পরীক্ষা দিতে হবে। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টায়। রচনামূলক অংশে নম্বর থাকবে ৩৫ ও এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন) থাকবে ১৫ নম্বরের। তবে প্রশ্নপত্র এখন যেভাবে হয়, সেভাবেই হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ থাকবে। আগে যেখানে ১০টি প্রশ্নের মধ্য থেকে আটটির উত্তর দিতে হতো, সেখানে এবার সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে। তবে এর মধ্যে চারটির উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ বাড়বে। প্রতি বিষয়ে ১০০ নম্বরের বদলে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। তবে ৫০ নম্বরকে ১০০ নম্বরে রূপান্তর করে পরীক্ষার ফল দেওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, আইসিটি, ধর্ম এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর দেওয়া হবে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসির ফল মূল্যায়ন করা হবে। এসএসসি ভোকেশনাল এর ক্ষেত্রে জেএসসি ও নবম শ্রেণি এবং এইচএসসি ভোকেশনাল এর ক্ষেত্রে এসএসসি ও একাদশের ফল মূল্যায়ন করা হবে।
এবার পরীক্ষা হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের প্রস্তুতি সেরে কেবল প্রবেশপত্র-কলম গুছিয়ে কেন্দ্রে ঢুকে যাওয়া নয়, করোনা ভাইরাসের চোখ রাঙানির মধ্যে বাড়তি সতর্কতা নিয়েই এবার পরীক্ষায় বসছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের। মাস্কে নাক-মুখ ঢেকে, হাতে স্যানিটাইজার নিয়ে অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতির মধ্যে রোববার তাদের ঢুকতে দেখা গেছে পরীক্ষার কেন্দ্রে। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের যারা নিয়ে এসেছেন সেই অভিভাবকদের মধ্যে দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি না মানার উদাসীনতা। হাজার হাজার অভিভাবককে পরীক্ষা কেন্দ্রে ভীড় করতে দেখা গেছে। ছোটরা মানলেও বড়দের এই উদাসীনতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অভিভাবকদের দেখা গেছে হাটবাজার- মেলার মতো একে অপরের ঘেষে বসে গল্প করছেন, ভীড়ের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। বেশি ভাগ অভিভাবকের মুখে মাস্ক ছিল না। কেউ ছেলে, কেউ মেয়ে, আবার কেউ নিজের ছোট ভাই-বোনসহ পরিবারের কোনো সদস্য পরীক্ষার্থীকে নিয়ে কেন্দ্রে আসেন। এতে করে বেড়ে যায় ভিড়।
তবে মহামারীকালের এই পরীক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সব কেন্দ্রে হাত জীবাণুমুক্ত করা ও তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। রাখা হয়েছে আইসোলেশন রুমও। কেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকদের ভিড় না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও বাইরে অভিভাবকদের জটলায় তা উপেক্ষিত ছিল। কিছু কেন্দ্রে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থাও দেখা যায়নি।
জানা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশ পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী ও কেন্দ্রের কর্মী ছাড়া অন্য যেন পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ না করে, সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ অভিভাবক সেই নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা করেননি।
অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন শিক্ষামন্ত্রীও। জানা যায়, তিনি শিক্ষার্থীর সাথে একজনের বেশি অভিভাবক না আসতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
সূত্র জানায়, অভিভাবকরা নিয়ম কানুন না মানায় রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে মারাত্মক ঝামেলা তৈরি হয়। অভিভাবকদের ব্যাপক চাপে কেন্দ্রের প্রবেশপথে পরীক্ষার্থীদের ঢোকা কঠিন হয়ে পড়ে। অধিকাংশ স্কুলের সামনের প্রধান সড়কে তৈরি হয় যানজট। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অভিভাবকদের সরে যেতে বললেও তাতে কাজ হয়নি। সোয়া ৯টা থেকে এই কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা ঢুকতে শুরু করে। অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড় ঠেলে কেন্দ্রে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদেরকে অনেক কষ্টে চিৎকার চেঁচামেচি করে ঢুকতে হয়েছে। অভিভাবকরা যেন করোনা ভাইরাসে স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা ভুলে গেছেন।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে বসে এক শিক্ষার্থী এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। সোমবার সকালে জেলা কারাগার অফিস কক্ষে বসে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্ৰহণ করে ওই শিক্ষার্থী।
জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার কামালপুর এলাকার বাসিন্দা ও কামালপুর উচ্চ বিদ্যলয়ের ছাত্র বিপ্লব। মাদক মামলায় ৪ নভেম্বর থেকে কারাগারে বন্দী রয়েছে।
বিপ্লবের কারাগার থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মো. হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী কারাগারে আসার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর আমরা পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। কারাগারের অফিস কক্ষে তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কারাগারে বসে যাতে তারা পড়াশোনা করতে পারে সেজন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এর আগে রোববার কারাগারে বসে পরীক্ষা দিয়েছেন এক পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি।
উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি স্কুল-কলেজের প্রায় শতভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। মধ্য আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন। ফলে নভেম্বরে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই সবাই টিকার আওতায় চলে আসবেন।