মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে অসামান্য অবদান রাখা দ্বৈত নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্টকে হাসপাতালে দেখতে ছুটে গেছেন জেলা প্রশাসক। শনিবার দুপুরে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লুসি হল্টের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।
চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়োজনে লুসি হল্টের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক ফল ও ফুল দিয়ে লুসি হল্টকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিকিৎসার জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন। এসময় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল-মামুন তালুকদার, সহকারী কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস দাস, প্রবেশ অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ, হাসপাতাল সমাজসেবা অফিসার দিলরুবা রইচি উপস্থিত ছিলেন।
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, আগের চেয়ে লুসি হল্টের শারিরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে তিনি (লুসি) উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত নানারোগে ভুগছেন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ লুসি হল্টের পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ১৮ নবেম্বর দিবাগত রাতে লুসি হল্ট অক্সফোর্ড মিশনে তার নিবাসে বেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পরেন। পরবর্তীতে তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জন হল্ট ও মা ফ্রান্সিস হল্ট। দুই বোনের মধ্যে ছোট লুসি। তার বড় বোন রুৎ অ্যান রেভা ফেলটন স্বামী ও তিন ছেলে নিয়ে ব্রিটেনে বসবাস করেন। লুসি ১৯৪৮ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৬০ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশে আসেন। যোগ দেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে। এখানে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়াতেন। এরপর আর দেশে ফিরে যাননি। প্রায় ৬১ বছর ধরে বরিশাল ছাড়াও তিনি কাজ করেছেন যশোর, খুলনা, নওগাঁ, ঢাকা ও গোপালগঞ্জে।
মানবদরদী ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হল্ট বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে নিরবে কাজ করেছেন। ওইসময় তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি বাংলাদেশের মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। যেকারণে নিজের দেশে না ফিরে তিনি বাংলাদেশেই থেকে যান। তিনি বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে বসবাস করেন। তার অন্তিম ইচ্ছা, চিরকালের মতো মিশে যেতে চান স্বাধীন বাংলার মাটিতে। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ গণভবনে ডেকে নিয়ে তার হাতে তুলে দিয়েছেন এ দেশের নাগরিকত্ব।