বাগেরহাটের রামপালের প্রত্যন্ত গ্রামে নির্মিত হচ্ছে “ আমাদের প্রাম ক্যান্সার কেয়ার এ- রিসোর্স সেন্টার”। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এ্যাডুকেশন সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে জেলার রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া নামক স্থানে এই ক্যান্সার চিকিৎসালয় নির্মিত হবে। প্রত্যন্ত প্রামে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জন প্রতিনিধিরা। আধুনিক এই প্রতিষ্ঠান চালু হলে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে বলে দাবি বাস্তবায়নকারী সংস্থার।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এ্যাডুকেশন সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে ঝিনঝনিয়া মৌজায় ৮ একর ২০ শতক জমির উপর ক্যান্সার কেয়ার এ- রিসোর্স সেন্টারটি নির্মান হবে। নির্ধারিত ওই জমিতে “আমাদের প্রাম ক্যান্সার কেয়ার এ- রিসোর্স সেন্টার নির্মান” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৮‘শ বর্গ মিটারের ২টি ভবন নির্মান, ৪টি বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মান করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১৪টি আধুনিক কম্পিউটার, ৬৪ প্রকার আসবাবপত্র, চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত ২৬ ধরনের মেশিন ও ষড়ঞ্জামাদি ক্রয় করা হবে। এসব কর্মযজ্ঞে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ১৮ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা প্রদান করবে সরকার এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এ্যাডুকেশন সোসাইটি নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে ৪ কোটি ৬২ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা। ভবন ও স্থাপনা বাউন্ডারি নির্মানসহ আনুসঙ্গিক কাজ হবে সরকারের গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে। নির্মান কাজের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহবান, ঠিাকাদার নির্ধারণ ও কার্যাদেশ প্রদান করেছে গণপূর্ত বিভাগ বাগেরহাট। সনেক্স ইন্টার ন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজও শুরু করেছে। ২০২২ সালের শেষের দিকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে রোগীদের সেবা প্রদান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
রামপাল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল হক লিপন বলেন, ক্যান্সার কেয়ার ও রিসোর্স সেন্টারটি রামপাল উপজেলার মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ নির্মিত হচ্ছে। সেন্টার থেকে এই এলাকার মানুষ খুব সহজে চিকিৎসা প্রহন করতে পারবে। যতদূর জেনেছি প্রতিষ্ঠানটির ভবন নির্মান কাজ কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি গণপূর্ত বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করবে। এলাকার মানুষকে সেবা প্রদান শুরু করবে। রামপাল ক্যান্সার কেয়ার ও রিসোর্স সেন্টার নির্মান করতে রামপালে স্থান নির্বাচন করায় সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই জন প্রতিনিধি।
স্থানীয় সাহারা খাতুন বলেন, রামপাল বাগেরহাটের একটি অবহেলিত উপজেলা। এই উপজেলায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা খুবই অপ্রতুল। আমাদের এখানে আমাদের প্রাম ক্যান্সার কেয়ার এ- রিসোর্স সেন্টার নামে যে হাসপাতাল হচ্ছে তাতে আমরা খুবই খুশি। এখানে হাসপাতাল হলে আমরা সহজে চিকিৎসা প্রহন করতে পারব।আশপাশ এলাকার লোকজনও এখান থেকে চিকিৎসা সুবিধা নিতে পারবেন।
মতিয়ার রহমান নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, শুনেছি ঢাকা ছাড়া কোথাও ক্যান্সার হাসপাতাল নেই। আমাদের এখানে যে ক্যান্সার হাসপাতাল হচ্ছে এটা জেনে আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব এখানে হাসপাতালটি বাস্তবায়ন করা হোক।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এ্যাডুকেশন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক রেজা সেলিম বলেন, “ আমাদের প্রাম ক্যান্সার কেয়ার এ- রিসোর্স সেন্টার নির্মান” প্রকল্পটি এই এলাকার মানুষের একটি স্বপ্নের প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য আমরা সব ধরণের দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করেছি। ভবন নির্মান শেষে আমাদের কাছে হস্তান্তর হলেই আমরা মানুষকে সেবা দেওয়া শুরু করব।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি পাইলট প্রকল্প। আমরা একটি নির্দিষ্ট সময় এই প্রকল্প পরিচালনা করব। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি আবারও সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আশা করি এই প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ক্যান্সার চিকিৎসাসহ অন্যান্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি আমূল পরিবর্তন আসবে।
গণপূর্ত বিভাগ, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফতেহ আজম খান বলেন, ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “ আমাদের প্রাম ক্যান্সার কেয়ার এ- রিসোর্স সেন্টার নির্মান” প্রকল্পটির কাজ শুরু করেছে। সার্ভিস পাইল নির্মানের কাজ চলছে। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি।আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভবন নির্মানসহ আনুসঙ্গিক কাজ শেষ করতে পারব।
সমাজ সেবা অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক এস.এম রফিকুল ইসলাম বলেন, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এ্যাডুকেশন সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে “ আমাদের প্রাম ক্যান্সার কেয়ার এ- রিসোর্স সেন্টার নির্মান” কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই এলাকার চিকিৎসা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তণ আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।