স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলোর অন্যতম ছিল মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য ও মানসম্মত করা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকাকালে এই লক্ষ্যে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু সহজলভ্য হয়েছে বা মানসম্মত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। সরকারি সংস্থার গবেষণায়ই উঠে এসেছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ৯৩ শতাংশ রোগীই হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ পায় না। এদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ছুটতে হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এসংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, গ্রাম পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকর নয়। শহর এলাকায়ও পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেই। এ কারণে রোগীরা চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়। সেখানে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি।
গবেষণা বলছে, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির নিজের পকেটের ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। এখন প্রায় ৬৯ শতাংশ ব্যয় ব্যক্তি নিজেই বহন করে থাকেন। অথচ ব্যক্তির ওপর চিকিৎসা ব্যয়ের এই যে চাপ তা কমাতে ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ক্রমান্বয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনা হবে এবং ২০৩২ সালে তা হবে মাত্র ৩২ শতাংশ। বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা। ২০১২ সালে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল ৬৪ শতাংশ, ২০১৫ সালে বেড়ে হয় ৬৭ শতাংশ এবং সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮.৫ শতাংশ। ক্রমান্বয়ে এই ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনযাত্রার ওপর। গবেষণায় উঠে আসে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৮৬ লাখ মানুষের আর্থিক অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। ব্যয় বেশি হওয়ায় ১৬ শতাংশ খানা বা তিন কোটির বেশি মানুষ অসুস্থ হলেও চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যায় না। এটি জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নকে ব্যাহত করবে এবং ক্রমান্বয়ে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তি অনিশ্চিত করে তুলবে। কাজেই সরকার এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ নেবে এটাই প্রত্যাশা।
স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তিতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি এবং বলা যায়, আরো পিছিয়ে যাচ্ছি। প্রথমেই এই পিছিয়ে যাওয়াটা রোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন করতে হবে। অভিযোগ আছে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা সময় খুবই কম দেন। উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে এই অভিযোগ আরো প্রবল। অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সফলভাবে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।