বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এবং আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল এমপি'র এলাকা হচ্ছে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ।
দেশব্যাপী ইউপি নির্বাচনের তৃতীয় ধাপ ২৮ নভেম্বর উল্লিখিত দুটি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় এই দিন। মতলব আসনের স্থানীয় সাংসদ এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এই দুই নেতার প্রভাব থাকায় অধিকাংশ ইউনিয়নে তাদের প্রভাব পড়েছে দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে। এজন্য এখানে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা একচেটিয়া বিজয়ী হতে পারেনি। নির্বাচনে ভাগ বসিয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
নির্বাচন শেষে ফলাফল ঘোষণা এমনটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
নির্বাচনে ১০ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জন ভোটে এবং ৫ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছেন। তবে বাকি ৭টি ইউনিয়নে ভোট বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
রোববার (২৮ নভেম্বর) দিনব্যাপী এই দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দু-একটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন শেষ হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচনকে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে। সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস এবং পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম-বার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
ভোট গণনা শেষে রাতেই বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন।
তার দেওয়া তথ্যমতে, মতলব উত্তর উপজেলার ৯ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ছয়টিতেই স্বতন্ত্র প্রাথীরা বিজয়ী হয়েছেন। তিনটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হন। এ উপজেলার বাকি চার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৪ ইউপির মধ্য ২টি ইউনিয়নে নৌকা ও একটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অন্য আরেকটি ইউনিয়নে ভোট ছাড়াই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন।
নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, ষাটনল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদাউস আলম সরকার। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ১৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ কে এম শরীফ উল্লাহ সরকার পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৯৩ ভোট।
সাদুল্যাপুরে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেবায়ের আজিম স্বপন পাঠান। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৫১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান লোকমান আহমেদ মুন্সী পেয়েছেন ৪ হাজার ৮১১ ভোট।
বাগানবাড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৯৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নান্নু মিয়া পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৫১ ভোট।
কলাকান্দা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ছোবহান সরকার সুভা। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম কাদির পেয়েছেন ২ হাজার ৭২৬ ভোট।
গজরা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শহিদউল্লাহ প্রধান। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৬১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৯৪ ভোট।
সুলতানাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক খোকন। তিনি মোট ৪৩৬৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী হাবীবা ইসলাম সিফাত পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৯ ভোট।
ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী। তিনি পেয়েছন ৬ হাজার ৪৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৪৮ ভোট।
ফরাজীকান্দি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করীম। তিনি মোট ১১ হাজার ৬০০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দানেশ পেয়েছেন ৪ হাজার ৬১৭
এখলাছপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুল ইসলাম ঢালী মুন্না। তিনি মোট ৩ হাজার ১৯৭ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৮ ভোট। ১১৯ ভোটে হেরে জসিমন উদ্দিন পুনরায় ভোট গণনার জন্য আবেদন করেছেন।
অন্যদিকে, মতলব দক্ষিণ উপজেলার ১নং নায়েরগাও উত্তর ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৯৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান সেলিম পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৮০ ভোট।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ২নং নায়েরগাও দক্ষিণ ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুস সালাম মামুন মৃধা। তিনি মোট ৬ হাজার ৪৪৪ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নাসির আহমেদ অরুন পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৯ ভোট।
উপাধি দক্ষিণ ইউনিয়নের বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা। তিনি মোট ৫ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ পাটোয়ারী পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৪০ ভোট।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত পাঁচ চেয়ারম্যান
মোহনপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের সামছুল হক চৌধুরী বাবুল, ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূর মোহাম্মদ, ইসলামাবাদ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন মুকুল, দূর্গাপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোকাররম হোসেন খান ওপেল, উপাধি উত্তর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহীদ প্রধান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছেন।