খুলনার পাইকগাছায় রাড়-লী ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদে আবারো ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নদ গর্ভে প্রায় ২০টি ঘর যেতে বসেছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে ৭০পরিবার অন্যত্রে চলে গেছে। ভাঙ্গন এলাকায় চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি তিন ভাগের ২ ভাগ নদগর্ভে চলে গেছে। জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্য নেই কোনো বাঁধ। সে কারণে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমা জোয়ারে পানি বাড়লে এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষতি হচ্ছে গাছপালা ফসলী জমি ও কাঁচা ঘরবাড়ি। নদের পাড়ের জেলে পরিবারে ভূধর বিশ্বাস জানান, আমার বাবা ও দাদার সময় থেকে প্রায় ১শ বছর ধরে এখানে বাস করে আসছে। নদের কূলে ১শ থেকে দেড়শ বিঘা জমি ছিলো। যেখানে ১৫০টি জেলে পরিবার বাস করতো। ভাঙ্গনের ফলে এখান থেকে ৭০টি পরিবারের ঘর নদের গর্ভে চলে গেছে। তারা কেউ অন্যত্র বাড়ি করেছে কেউবা রাস্তার পাশে ও অনেকেরই গুচ্ছগ্রামে ঠাঁই মিলেছে। একই এলাকার লিপিকা বিশ্বাস জানান, রাতে জোয়ার আসলে ভয় হয়, বাচ্চাদের নিয়ে রাত জেগে বসে থাকি কখন না ঘরখানা নদের গর্ভে চলে যায়। ভাঁটা হলে ঘুমাতে যাই। রাড়-লীর ৩নং ওয়ার্ডের ফরিদা বেগম (৫৫) বলেন আমাদের বাড়ি ছাড়া নদের প্রায় আঁধা কিলোমিটার দূরে ছিলো। জেলে পল্লীর পরে ছিলো আমাদের বসবাস। আমরা এখানে প্রায় ৪০ পরিবাবার বাস করতাম। জেলে পল্লীর পর আমরা এখন নদের কিনারায় রয়েছি। যে কোনো সময় ঘর খানি নদে চলে যাবে। একই এলাকার বারিক মোড়ল জানান, আমি তিনবার ঘর পরিবর্তন করেছি। তার পরেও রান্না ও কাঠের ঘর নদে চলে গেছে। বাকি রয়েছে থাকার ঘরখানি। যে কোনো সময় নদে চলে যাবে। তেমন কোনো টাকা পয়সা নাই অন্যত্রে জমি কিনে বাড়ি করবো। সরকার যদি নদের ওপারে জেগে উঠা চরে আমাদের ঘর বাঁধার জায়গা দিতেন তা হলে আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করতে পারতাম। ইউপি সদস্য মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার পানি ঠেকানোর জন্য নিজস্ব অর্থায়ণে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে মাঠের ধান গুলো বাঁচিয়েছি। অতিরিক্ত পানি বাড়লে ঘরবাড়ি ফসলাদি বাঁচানো সম্ভব হবে না। রাড়-লী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কপোতাক্ষ নদ প্রায় ৪০ বছর ধরে ভাংছে। এখানে সরকার ভাঙ্গন রোধে তেমন কোনো বরাদ্দ দেননি। আমি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় উত্থাপন করেছি। যাতে খুব তাড়া তাড়ি ভাঙ্গন রোধে বরাদ্ধ পাওয়া যায় তার জন্য আমাদের এমপি মহাদয়ের সাথে কথা বলবো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকরী প্রকৌশলী রাজু আহম্মদ বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছে। শুধু রাড়-লীর মালোপাড়া না বোয়ালিয়ার মালোপড়া ও রামনাথপুরে ভাঙ্গন এলাকা জরিপ করে কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে।