একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন। ২০১৮ সালের এই দিনে তিনি কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় নিজ বাড়িতে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (১ ডিসেম্বর) বাদ আছর কুড়িগ্রামের আরাজী পলাশবাড়ী এলাকার গুচ্ছ পাড়ার বাড়ীতে ও গ্রামের বাড়ী রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া গ্রামের বাড়িতে বাদ মাগরিব পারিবারিকভাবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে আবু তাহের ও ভাই হাসান মিয়া।
বীর প্রতিক তারামন বিবির ভাই হাসান মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, গত বছরের এই দিনে বোনের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে সে সময়ের জেলা প্রশাসক ও ইউএনও মহোদয়কে বাড়িতে দাওয়াত করেছিলাম। কিন্তু ওঁরা আসেননি। এতে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। তাই এবারও আর পূর্বের মত করে আয়োজন করা হয়নি।
তারামন বিবি ছিলেন রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামের প্রয়াত আবদুস সোবহানের সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে তৃতীয় কন্যা সন্তান। তিনি লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রান্না করতেন ১৪ বছর বয়সী তারামন। রান্না করতে করতে অস্ত্র চালাতে শেখেন। তারপর রান্নার খুন্তি ফেলে রাইফেল হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন সম্মুখ সমরে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হলেও সে কথা তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর জানতে পারেননি। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলী এবং রাজিবপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকীর সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে বীরপ্রতীক খেতাবের পদক তুলে দেওয়া হয়। বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু’জন নারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন তারামন বিবি।
তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে। ১৯৭১ সালে তারামন বিবি ১১নং সেক্টরে নিজ গ্রামে ছিলেন। তখন ১১নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিল মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান। এরপর একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক সম্মুখযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। এ কারণে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।
বীর প্রতীক তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের জানান, বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু’জন নারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন আমার মা তারামন বিবি। একাত্তরের রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নিজ উদ্যোগে পারিবারিকভাবে বাদ আছর কুড়িগ্রামের আরাজী পলাশবাড়ী এলাকার গুচ্ছ পাড়ার বাড়ীতে ও রাজীবপুরের গ্রামের বাড়ীতে বাদ মাগরিব মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছি।
রাজিবপুরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল হাই সরকার জানান, বীর প্রতীক তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিল না।
এ বিষয়ে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্তী জানান, বীরপ্রতীক তারামন বিবির তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে এখন পর্যন্ত সরকারী কোন নির্দেশনা নেই।'আমি আনঅফিসিয়ালি বাদ জোহর ওঁর বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছি বলে তিনি জানান।