নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝেও সড়কে মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, চলতি বছরের ১১ মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৩৭ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু নভেম্বর মাসেই ৫৪জন মারা গেছেন। চলতি বছরের ১১ মাসে মোট ৪ হাজার ২৬৮ টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৪৪ জন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ১৪ শতাংশ। গত ৩ ডিসেম্বর রাতেও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে মাহাদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থী। এর আগে ২৪ নভেম্বর গাড়ি চাপায় মারা যায় নাইম হাসান নামের এক শিক্ষার্থী। ২৯ নভেম্বর রাতে মাইনুদ্দিন ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থীও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়।
হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝে ২৪ নভেম্বর গাড়ি চাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে আন্দোলনের সাথে নিরাপদ সড়কের দাবি সহ ৯ দফা যুক্ত হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ৬ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীরা লাল কার্ড প্রদর্শন করে। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার উর্ধ্বমুখী হলেও তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। পরিবহন খাতে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছেন। এ অবস্থার উন্নয়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। গত নভেম্বর মাসে দেশে ৩৭৯ টি দুর্ঘটনায় ৪১৩ জন নিহত হয়েছেন। গড়ে প্রতিদিন মারা গেছেন ১৪ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ৬৭ জন্য এবং শিশু ৫৮ জন। নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৪ জন শিক্ষার্থী। এর আগে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১১৮ জন শিক্ষার্থী। নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই ছিলেন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী। ২৩ শতাংশ ছিলেন পথচারী। আর যানবাহনের চালক ও সহকারী ছিল ১৩ শতাংশ। সবচে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মুখোমুখি সংঘর্ষ ও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এসব দুর্ঘটনায় যানবাহন হিসেবে মোটরসাইকেল, ট্রাক ও বাস বেশি সম্পৃক্ত ছিল। সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার শুধু পথচারী নয়, গণ-পরিবহন চালক ও সহকারীও মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, বলেছিল অনেক উদ্যোগের কথা। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন হয়নি। নিরাপদ সড়কের সব উদ্যোগ আটকে যায় প্রভাবশালী পরিবহন মালিক শ্রমিকদের চাপে। এ ছাড়া নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৩০ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সে নির্দেশনারও বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে পরিবহন মালিক সমিতির নেতা শাজাহান খানের নেতৃত্বে ১০১ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। পরিবহন খাতে দীর্ঘ দিনের অনিয়ম এখাতে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে। কাজেই সড়ক নিরাপদ করার দাবি এবং প্রতিশ্রুতি যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়েছে। ফলে সড়কে প্রতিদিন সম্ভাবনাময় প্রাণ ঝরছে। পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতি মেনে নেয়া যায় না। তাই সরকারকে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
সব প্রভাব প্রতিপত্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সরকারের উচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সুষ্টভাবে বাস্তবায়ন করা। উদ্যোগ নিতে হবে গণ-পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, দক্ষ চালক তৈরি, চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্ধারণ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধির। সেই সাথে মহাসড়কে স্বল্প গতির যান চলাচলের জন্য সার্ভিস রোড নির্মাণ করা জরুরি। আশা করি দেশের নাগরিকদের সড়কে নিরাপদ চলাচলের জন্য সরকার দ্রুত মত সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।