বাংলাদেশ হলো নদীমাতৃক দেশ। এই দেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে ছোট-বড় প্রায় সাত শত নদী। নদীর ওপরই এ দেশের কৃষি নির্ভর করে। কিন্তু নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবেÑএ যেন শুধুই কথার কথা। বাংলাদেশের নদ-নদীর অবস্থা দেখে এমনটাই মনে হয়। পলি জমে জমে বেশির ভাগ নদী ভরাট হয়ে গেছে। শীতের সময় শুকিয়ে যায়। দখল ও দূষণের ফলে অনেক নদী সংকুচিত হতে হতে মরা খালের রূপ নিয়েছে। আবার সেগুলো ভরাট করে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। একেবারে চিহ্ন মুছে গেছে এমন নদীর সংখ্যাও কম নয়। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে নদী বা নদীপথ বলে প্রায় কিছুই থাকবে না।
বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা যায়, বিষখালী ও পায়রা নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী খাকদোন নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৫ কিলোমিটারই মরা খালে পরিণত হয়েছে। আগে এই নদী দিয়ে বড় বড় স্টিমার চলেছে। এখন প্রতিবছর স্বল্প পরিসরে ড্রেজিং করার কারণে মাত্র ছয় কিলোমিটার অংশে কোনো রকমে ছোটখাটো নৌযান চলাচল করতে পারে। তাও শীতকালে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। জোয়ার-ভাটা বুঝে চলাচল করতে হয়। বিআইডাব্লিউটিএ ১৫০ জন নদী দখলদারের তালিকা করেছে, যার মধ্যে অনেক প্রভাবশালীর নাম রয়েছে। এর আগে দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। অথচ খাকদোন নদ না থাকলে এর সঙ্গে যুক্ত ১৫টি খালও থাকবে না। এলাকায় এর প্রভাব হবে মারাত্মক। একইভাবে দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে হবিগঞ্জের সোনাই নদ। বর্ষায় সামান্য পানি থাকলেও শীতকালে পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। তখন আরো মাটি ভরাট করে চলে স্থাপনা নির্মাণ। কিছুদিন আগেও যে নদীর প্রস্থ ছিল আড়াই শ মিটারের বেশি, এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কয়েকটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানও সোনাই নদ দখল করে বহুতল ভবন বা স্থাপনা নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নদী দখলের এমন মহোৎসব সারা দেশেই চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরাই এসব দখলদারি করে থাকে। আর এটি সম্ভব হয় প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে। দখলদার প্রভাবশালী হলে প্রশাসন অনেক সময়ই তাদের কাজে বাধা দিতে পারে না। আবার বিশেষ যোগাযোগের কারণে প্রশাসনের যোগসাজশেও অবৈধ দখলদারি চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রকৃতি, জনজীবন, চাষাবাদÑসব কিছুই নদীনির্ভর। তাই বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আমাদের নদী বাঁচাতেই হবে। সরকার এ ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেবে এটাই কাম্য।