করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ এড়াতে দেশের বেশির ভাগ স্থলবন্দরেই পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের পর বাংলাদেশে ঝুঁকি বাড়ছে। ইতিমধ্যে সরকার আফ্রিকার দেশগুলো থেকে প্রবাসীদের দেশে আসায় নিরুৎসাহ করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে স্থলপথে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ এখনো যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, যশোরের বেনাপোল, লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও সেগুলোতে তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত থেকে আসা যাত্রীদের বিষয়ে কোয়ারেন্টিনসহ এখনই আরো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বেশির ভাগ স্থলবন্দরেই এখনো পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। বাংলাবান্ধা বন্দরে প্রতিদিন ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকছে। চালকরা মাস্ক ছাড়া বন্দর এলাকায় অবাধে ঘুরছে। ফলে ওই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ওমিক্রন সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। বর্তমানে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ জন মানুষ যাতায়াত করে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা নেগেটিভ সনদধারীদের ভারত থেকে দেশে ঢুকতে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। অবশ্য বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশের দাবি, বন্দর এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ভারত থেকে যারা বাংলাদেশে আসছে তাদের এখন ৪৮ ঘণ্টার আরটিপিসিআর ল্যাবের করোনা পরীক্ষার সনদ নেয়া হচ্ছে। গাড়িচালকদের বিষয়েও শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে সতর্কতার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হলেও ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে না। বরং বিভিন্ন স্থলবন্দরেই ট্রাকচালক ও হেলপারদের মাস্ক ছাড়া ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। তবে কয়েকটি স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা যাত্রীদর ডিজিটাল স্ক্যানিং মেশিনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। কিন্তু যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাকচালক ও সহকারীদের ওপর নজরদারি কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, ওমিক্রন নিয়ে ভোমরা ইমিগ্রেশন ও স্থলবন্দরে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়নি। তবে ওমিক্রন সতর্কতা মাথায় নিয়েই সব দাপ্তরিক কাজ চলছে। ওই স্থলবন্দর দিয়ে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৮০ জন পাসপোর্টধারী যাতায়াত করেছে। তবে আখাউড়া স্থলবন্দরে যাত্রীদের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হচ্ছে। ওই স্থলবন্দরে ওমিক্রনের উপসর্গ আছে সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশ নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। এমনকি প্রয়োজন হলে কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। আর লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা সব যাত্রীর ৪৮ ঘণ্টা মেয়াদি করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদ দেখা হচ্ছে। তাছাড়া ভারতীয় ট্রাকচালকদেরও বাইরে বের হতে হলে ৪৮ ঘণ্টা আগের করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদ দেখাতে বলা হচ্ছে। তবে বুড়িমারী বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো ওমিক্রন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি বলে জানা যায়। তারপরও সেখানে ভারতীয় ট্রাকচালকদের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর জানান, ওমিক্রন সংক্রমণ এড়াতে স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে আগের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর করতে বলা হয়েছে।