১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল হানাদার মুক্ত হয়েছিল। সেদিন বরিশালের আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল হাজার হাজার মানুষের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে।
বরিশাল মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচির অয়োজন করেছে। বুধবার সকাল ১০ টায় নগরীর ওয়াপদা কলোনি সংলগ্ন স্মৃতি ৭১ নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পন করা হবে। দুপুরে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে নগরীর শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সম্প্রীতির আলোয় আলোকিত কনসার্ট।
সূত্রমতে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ “অপারেশন সার্চলাইট”র মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনারা শুরু করে গণহত্যা। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার খবর বরিশালে টেলিফোনে আসে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার বার্তা বরিশাল পুলিশ লাইনের ওয়ারলেসযোগে পৌঁছে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের কাছে। গভীর রাতে পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার ভেঙ্গে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র লুট করে মুক্তিযোদ্ধারা। ২৬ মার্চ ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের শপথ পড়িয়ে অস্ত্র হাতে তুলে দেয়া হয়। নুরুল ইসলাম মঞ্জু মেজর জলিলকে খবর পাঠান। সকালে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গঠিত দক্ষিণাঞ্চলীয় সচিবালয় গঠিত হয়। ওই সচিবালয়ের মাধ্যমে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ভারত থেকে অস্ত্র আমদানি, গল্লামারির যুদ্ধ, চাঁদপুরে অস্ত্র প্রেরণসহ বেশ কয়েকটি অপারেশন করে মুক্তিযোদ্ধারা। এখান থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা হতো।
১৮ এপ্রিল পাকিস্তানী হানাদাররা আকাশ পথে বরিশালে প্রথমে হামলা চালায়। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মেডিকেলের সামনে, কীর্তনখোলা তীরে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। সেদিন বোমায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। পরে ২৫ এপ্রিল তারা জল, স্থল ও আকাশ পথে দ্বিতীয় দফা আক্রমণ করে। স্থলপথে বরিশাল আসার পথে পাক সেনারা গৌরনদীতে বাঁধাগ্রস্থ হয়। সেদিনকার প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে গৌরনদীর নাঠৈ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল হাসেম, বাটাজোরের মোক্তার আলী, গৈলার আলাউদ্দিন সরদার এবং চাঁদশীর পরিমল মন্ডল শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে সেদিন আটজন পাক সেনা নিহত হয়েছিলো।
পাক সেনারা প্রথমে অশ্বিনী কুমার টাউন হল পরে জিলা স্কুলে এবং সর্বশেষ ওয়াপদায় তাদের হেড কোয়ার্টার গড়ে তোলে। এখানেই তৈরী করা হয় নির্যাতন কক্ষ। অসংখ্যবার সম্মুখ যুদ্ধ শেষে ৮ ডিসেম্বর বরিশাল পাক হানাদার মুক্ত হয়। সেদিন হাজার হাজার মানুষের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে
বরিশালের আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল।