জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের পাশে উজানগ্রাম ইউনিয়নের বিত্তিপাড়া ছিল পাক হানাদার, রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর বৃহৎ বধ্যভূমি। কুষ্টিয়া পিস কমিটির চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট সা’দ আহমেদের নেতৃত্বে এ সময় বিহারী, রাজাকার ও পিস কমিটির সদস্যসহ স্বাধীনতাবিরোধীরা হয়ে ওঠে বেপরোয়া। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানি বাহিনীর সঙ্গে নৃশংস হত্যাকান্ডে যোগ দিয়েছিল তারা। সেই বিশ্বাসঘাতকদের জন্য যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্থানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে কত মুক্তিসেনা প্রাণ হারিয়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানা নেই। কত মায়ের সন্তানকে ধরে নিয়ে চোখের সামনে জীবন্ত কবর, জবাই, মাটিতে অর্ধেক পুঁতে পাথর ছুড়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। সেদিনের কথা মনে করে কত মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী এখনো চোখের জলে বুক ভাসান। কুষ্টিয়ার ইবি থানার বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি এমনই এক স্থান। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মূখ যুদ্ধে পাকিস্থানি বাহিনী পিছু হটতে থাকে এবং শক্রু মুক্ত হয় এই স্থানটি।
১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া হানাদারমুক্ত হলে জেলার বিভিন্ন স্থানে আবিষ্কার হতে থাকে একটার পর একটা গণকবর ও বধ্যভূমি। এসব বধ্যভূমি পূর্ণ ছিল বাঙালীর কঙ্কাল আর হাড়ের স্থপে। পরিত্যক্ত বাড়ির কুয়ার মধ্যেও পাওয়া যায় গলিত পচা লাশ ও মানুষের কঙ্কাল। কুষ্টিয়ার বৃহত্তম বধ্যভূমি বিত্তিপাড়ায় ছিল পাক আর্মিদের ক্যাম্প। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজনকে এখানে এনে টর্চার করা হতো। এ ছাড়া বিত্তিপাড়ায় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কে চালাচলকারী যানবাহন থামিয়ে সন্দেহভাজন পুরুষ-নারীকে নামিয়ে নেয়া হতো। পরে তাদের আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে চালানো হতো শারীরিক নির্যাতন। মারা গেলে ক্যাম্পের আশপাশেই পুতে রাখা হতো কিংবা পুকুর-খাদে ফেলে দেয়া হতো।
দেশ স্বাধীনের পর “জন স্টোন হাউস ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের উপস্থিতিতে বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি থেকে উদ্ধার করা হয় দুই পিকআপ ভর্তি মানুষের কঙ্কাল, মাথার খুলি ও হাড়। কুষ্টিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ‘বিত্তিপাড়া’ অন্যতম বৃহৎ বধ্যভূমি।
বৃহ:স্প্রতিবার সকালে ৯ ডিসেম্বর উপলক্ষে বধ্যভ’মি চত্ত্বেরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন এবং, নিহতদের আত্মার মাগফেরাত দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বধ্যভ’মি রক্ষনাবেক্ষণ কমিটির সভাপতি যুদ্ধকালী কমান্ডার বীর যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সিরাজুল হক, কমিটির সাধারন সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম বিশ^াস শহিদ, মুক্তিযোদ্ধার আকমল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী, মুক্তিযোদ্ধা আ: রাজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা আজিজল খান, মুক্তিযোদ্ধা আবু তালেব,আবু হাসান মেম্বার, ছলেমান মন্ডল, নিহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্ত্রী,সন্তানসহ আরো অনেকেই এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শাহিদুল ইসলাম বিশ^াস।
স্বাধীনতার পর এ জায়গাটি সংরক্ষণ করা হয়নি। ২০০৩ সালে বধ্যভূমি হিসেবে শনাক্ত করতে সেখানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।খুলনা বিভাগের সৃষ্ট বধ্যভ’মির তালিকায় স্থান পেয়েছে এবার।