বিদ্যালয়কে ভেষজ গুণসম্পন্ন বিভিন্ন দেশীয় বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সংরক্ষণের স্থান ও সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জহির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় ও প্লান্ট কনজারভেশন এ- রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর সার্বিক সহযোগিতায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ঔষধী গুনসম্পন্ন বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির উদ্ভিদ এর সমন্বয়ে ক্ষুদ্র আকারের বন তৈরির উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
তারই আলোকে গত ১৮.১২.২০২১ ইং তারিখে একটি পরিচিতি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর মোঃ আজহারুল হক, পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চল, ময়মনসিংহ, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আবু নূর মোঃ আনিসুল ইসলাম চৌধুরী, উপপরিচালক(মাধ্যমিক), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চল, ময়মনসিংহ। আরোও উপস্থিত ছিলেন সনজিত চন্দ্র বম্মণ, প্লান্ট কিউরেশন ম্যানেজার, প্লান্ট কনজারভেশন এ- রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ময়মনসিংহ, জহির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ আরো অনেকে। সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়। এ সময় কর্মসূচীর সহযোগীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে জুমে অংশগ্রহণ করেন মুহাম্মদ হান্ডি গুনাওয়ান, প্রভাষক, ইন্দোনেশিয়া ইউনিভার্সিটি অফ এডুকেশন, ইন্দোনেশিয়া।
মূখ্য আলোচক হিসেবে সার্বিক কর্মসূচি ও প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন মোঃ রিশাদ আব্দুল্লাহ, গবেষণা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চল, ময়মনসিংহ। তিনি বলেন, বিশ্বের ৩৮০,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদের ২০% বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে (কব,ি ২০১২)। ওটঈঘ-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬০,০০০ উদ্ভিদ প্রজাতি (২৫%) ২০৫০ সালের মধ্যে বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে (টনবৎড়র, ২০১০)। সম্প্রতি পরিচালিত এক সমন্বিত গবেষণায় বলা হচ্ছে, গত আড়াই শ বছরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির গাছ। এ সংখ্যা একই সময়ে বিলুপ্ত পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সরীসৃপের মিলিত সংখ্যার দ্বিগুণ।
যুক্তরাজ্যের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনস, কিউ ও স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে আড়াই’শ বছরে পৃথিবী থেকে ৫৭১ প্রজাতির উদ্ভিদ হারিয়ে গেছে। একই সময়ে পশু, পাখি ও সরীসৃপ মিলে বিলুপ্ত প্রজাতির সংখ্যা ২১৭। যা ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এমনিতে ৫৭১টি উদ্ভিদের বিলুপ্তি হওয়াটাকে একটি সংখ্যা মনে হতে পারে। কিন্তু আদতে এর সঙ্গে পুরো পৃথিবীর অন্য প্রাণগুলোও জড়িয়ে আছে বাস্তুসংস্থানের কারণেই। কারণ এখনো এই গাছগুলোই অক্সিজেন ও খাদ্যের জোগানদাতা। ফলে উদ্ভিদের বিলুপ্তি অন্য প্রাণীর বিলুপ্তি তরান্বিত হওয়ার কারণ। একটি প্রজাতির হারিয়ে যাবার সাথে সাথে প্রায় ৩০ প্রজাতির উদ্ভিদ হারিয়ে যায়।
সামগ্রিক এ চিত্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও অভিন্ন। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উদ্ভিদ প্রজাতির বৈচিত্র সংরক্ষণে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল, বিভিন্ন পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন সমুহে বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ সংরক্ষনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সমুহে এ ধরনের সংরক্ষণ কার্যক্রম নেই বললেই চলে।
তিনি আরোও জানান যে, ময়মনসিংহ শিক্ষা অঞ্চলের অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত বর্ধণশীল বিদেশী উদ্ভিদ যেমন- আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস ও মেহগনি লাগিয়ে আসছে। কাঠ ব্যতীত এ সকল গাছ প্রকৃতির কোন উপকারে আসছে না।
তিনি বলেন, এ কর্মসূচীর মাধ্যমে বিদ্যালয়ে একটি ছোট আকারে ঘন বন সৃষ্টি করা হবে। এ বনের বিশেষত্ব হলো- প্রচলিত বৃক্ষরোপণ পদ্ধতির তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ বেশি গাছ লাগানো হবে। গাছের বৃদ্ধি ১০ গুণ দ্রুত হবে এবং ফলস্বরূপ রোপণ ৩০ গুণ ঘন হবে। গাছের উচ্চতা প্রতি বছর কমপক্ষে ১ মিটার বৃদ্ধি হবে এবং তিন বছরের মধ্যে এটি সম্পূর্ণরূপে রক্ষণাবেক্ষণ মুক্ত, বন্য এবং স্থানীয় টেকসই বন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
উল্লেখ্য যে, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এ ধরনের বনায়ন কর্মসূচি এটাই প্রথম, বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে।
বনায়ন কর্মসূচি পরিচালনার লক্ষ্যে একজন শিক্ষক ও ৩০ জন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে বিদ্যালয়ে একটি উদ্ভিদ সংরক্ষণ ক্লাব গঠন করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক, প্রশাসক সহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সদস্যগণ বিভিন্ন সংরক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সক্রিয় সংরক্ষণ কর্মী হিসেবে বিলুপ্তপ্রায়/হুমকির মুখে থাকা উদ্ভিদ প্রজাতিকে রক্ষা করবে বলে আশা করা যায়। এতে স্কুলটি হয়ে উঠবে ভেষজ গুণসম্পন্ন বিভিন্ন দেশীয় বিপন্ন উদ্ভিদের সংরক্ষণের স্থান। সার্বিক লক্ষ্য হল স্থানীয় বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটানো ও পাঠ্যপুস্তককে প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত করা।
আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ঔষধী বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে বনায়ন কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন।
সার্বিক কর্মসূচীর কারিগরি সহায়তায় ছিল ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি ও মন্টানা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র। পরিকল্পনা ও সমন্বয়কারী, মোঃ রিশাদ আব্দুল্লাহ, গবেষণা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চল, ময়মনসিংহ।