বিরান মরুভূমিতে তখনও আসেনি শীত, প্রকৃতি তখনও পরিধান করতে শুরু করেনি কুয়াশার মুখোশ। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ...পাওয়া গেলো এক দুর্লভ অনুমোদন। মিশরের যে উপত্যকায় পাঁচশত বছর ধরে পাথার কঠিন মাটি কেটে ফারাওদের জন্যে তৈরী করা হয়েছিলো জাঁকজমকপূর্ণ সমাধি, অবশেষে সে উপত্যকা খননের অনুমোদন পাওয়া গেলো- অনুমোদন পেলেন লর্ড ক্যানাভেন। এই সেই রহস্যাবৃত উপত্যকা, যাকে পৃথিবীর মুসাফিরেরা চিনে 'ভ্যালি অফ দ্য কিংস' নামে। অতঃপর, ভ্যালি অফ দ্য কিংসে শুরু হলো খননের কাজ...এই সমস্ত কাজ তদারকি করার ভার যার উপরে ন্যস্ত করেছিলেন পৃষ্ঠপোষক লর্ড ক্যানাভেন, তিনি ছিলেন ব্রিটিশ আর্টিস্ট ও ইলাস্ট্রেটর স্যামুয়েল জন কার্টারের কনিষ্ঠতম সন্তান হাওয়ার্ড কার্টার।
খননের কাজ চলছে শ্লথ গতিতে- কখনও মরুভূমি, কখনও বা নীল নদ অতিক্রম করে আসা বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে বিট্রিশ প্রতœতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার ও তার অধীনস্থ খননকারীদের। প্রকৃতিকে শীতলতা দিয়ে জড়িয়ে নিতে ধীরে ধীরে আর্বিভূত হয়েছে শীত। সমস্ত রাত্রি কুয়াশায় ভিজতে থাকা ভ্যালি অফ দ্য কিংসের মাটির দিকে তাকিয়ে নভেম্বরের সেই সব সকালে কি বলতেন হাওয়ার্ড কার্টার ফিসফিসিয়ে, তা এক বিস্ময়! যা বহুকাল পূর্ব হতেই নির্ধারিত, তা বদলের সুযোগ কোথায়! খননের কাজ শুরু হবার পরপরই শুরু হয়ে গেলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
যে যুদ্ধকে বলা হয়ে থাকে সকল যুদ্ধের অবসান ঘটানোর যুদ্ধ, সেই যুদ্ধের তখনও হয় নি শেষ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিট্রিশ সরকারের কূটনীতিক দূত ও অনুবাদক হয়ে কাজ করা হাওয়ার্ড কার্টার মনস্থির করলেন ফের ভ্যালি অব দ্য কিংসে ফিরে আসবেন। যার শিরায় বাহিত রক্তে প্রাচীনতার প্রতি অসীম আকর্ষণ, তাকে ফিরিয়ে রাখা দুষ্কর- অতএব, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে ভ্যাল অফ দ্য কিংসে আবারও ফিরে এলেন হাওয়ার্ড কার্টার। শুরু হলো ফের অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ ও খননের কাজ। দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরও পাঁচটি বছর, কিন্তু ততদিনেও পাওয়া গেলো না কোনো আশাপ্রদ ইঙ্গিত। শেষে লর্ড ক্যানাভেন অসন্তুষ্ট হয়ে আলোচনায় বসলেন হাওয়ার্ডের সাথে- আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হলো এই যে, আর মাত্র একটি ঋতু অবধি যাবতীয় খরচ বহন করবেন লর্ড ক্যানাভেন।
গভীর রাত্রি...থিব্যান নেক্রোপলিসে অবস্থিত নিজ গৃহের ছোট্টো বিছানায় শুয়ে ভাবছেন হাওয়ার্ড কার্টার এই অবস্থায় কি করণীয় তার! পরদিন ভোরে ভ্যালি অফ দ্য কিংসে গিয়ে হাওয়ার্ড র্যামেসাইড পিরিয়ডে নির্মিত হওয়া কুঠিরগুলো আরও একবার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন। পর্যবেক্ষণ শেষে হাওয়ার্ড নিয়োজিত খননকারীদের কুঠিরগুলো পরিষ্কার করে এদের নিম্নস্থ পাথুরে ধ্বংসাবশেষ সরাতে বললেন। সময়ের ঘূর্ণনে সকালকে বিলীন করে দিতে বহু পথ অতিক্রম করে এসেছে সূর্যের জ্যোতি...পাহাড়ে, পাথরে, বিরাণ ভূমিতে কেবলই রোদের ঘ্রাণ- পিপাসিত খননকারীরা, পিপাসিত হাওয়ার্ড কার্টার। হুসেন আব্দুল-রাসোল নামক যে যুবক প্রতিদিন তাদের জন্যে বয়ে আনতো সুমিষ্ট জল, ১৯২২ সালের চৌঠা নভেম্বরের দুপুরে সে বালক যখন একইভাবে বয়ে আনছিলো জল, তখনই দুর্ঘটনাবশত একটি পাথরের সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন তিনি।
আপাতদৃষ্টিতে যা দুর্ঘটনা বলে প্রতীয়মান হয়, কখনও কখনও তার অন্তরালে উঁকি দেয় পরম সৌভাগ্য। যদি জল বহনকারী এ যুবক সে দুপুরে পাথরে ধাক্কা লেগে হোঁচট না খেতেন, তাহলে হয়ত কখনওই নিরেট প্রস্তরের ন্যায় মাটির ভেতরে খোদিত সিঁড়ির প্রথম ধাপটির সাক্ষাৎ মিলতো না। হাওয়ার্ড কার্টার সুদক্ষ খননকারীদের নিয়ে আংশিকভাবে সিঁড়ির ধাপগুলো খনন করতে লাগলেন, যতক্ষণ না চুন ও কাদামাটি দিয়ে পলেস্তার করা দ্বারটি খুঁজে পাওয়া গেলো। দ্বারে মুদ্রিত করা অস্পষ্ট হায়ারোগ্লিফিক দেখে ঠিক বুঝতে পারলেন না হাওয়ার্ড কি লিপিবদ্ধ করা আছে সেখানে! কি এক ভেবে হাওয়ার্ড কার্টার সিঁড়ির ধাপগুলো আবারও পাথর দিয়ে পূর্ণ করে দেবার আদেশ দিলেন...
টেলিগ্রাফ পাওয়ার আড়াই সপ্তাহ পরে লর্ড ক্যানাভেন তার একুশ বছর বয়সী কন্যা ইভলিন হারবার্টকে সঙ্গে নিয়ে থিব্যানে হাওয়ার্ড কার্টারের গৃহে চলে আসেন। হাওয়ার্ড কার্টার যে ইভলিনকে শৈশব থেকেই চিনতেন, তাকে যুবতী বয়সে কখনও কালো রংয়ের স্লিভলেস পোশাকে দেখে বিমোহিত হয়েছেন কিনা তা আমার জানা নেই। একবিংশ শতাব্দীতে বসতরত আমার ইভলিনকে মুখোমুখি দেখবার সুযোগ না হলেও আমি তাকে দেখেছি, দেখেছি সাদাকালো ছবির ভেতর দিয়ে- ছড়ানো বাঘের চামড়া উপরে দীর্ঘ মালা গলায় জড়িয়ে বসে থাকা ইভলিনের নগ্ন বাহু, ম্যাগনোলিয়া ব্লসোমের মতো সুকোমল চেহারা, আর কোঁকড়ানো চুল আমাকে সম্মোহিত করেছিলো- আমি জানি না হাওয়ার্ড কখনও তার প্রেমে পড়েছিলেন কিনা, তবে আমি ইভলিনের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা নিষ্পাপ চোখের রহস্যময় চাহনির প্রেমে পড়েছিলাম তৎক্ষণাৎ।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে নভেম্বর দীর্ঘ আলখাল্লা ও মাথায় হ্যাট পরিহিত ইভলিন প্রতœতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার ও পিতা জর্জ হারবার্টের(লর্ড ক্যানাভেন) সাথে প্রস্তর সিঁড়ির ষোলোটি ধাপ পেরিয়ে হায়ারোগ্লিফিক মুদ্রিত করা দ্বারের সমুখে উপস্থিত হলেন- তাদের উপস্থিতিতে হাওয়ার্ড যে বাটালি তার ১৭তম জন্মদিনে দাদীর কাছে থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন তা দিয়ে দ্বারটির ডানপাশের হাতলের উপরের দিকে ক্ষুদ্র একটি ছিদ্র করেন। মোমের মৃদু আলোতে প্রথমে হাওয়ার্ড কার্টার ভেতরকার কিছু ঠাওর করতে না পারলেও, ক্রমেই তার চোখ সে আলোতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। যতবারই বহুকাল ধরে ভেতরে আটকে পড়া বাতাস ধাবিত হচ্ছিলো মোমের দিকে, ঠিক ততবারই মোমটির শিখা দপ করে জ¦লে উঠছিলো- আর এই আলোতেই হাওয়ার্ড দেখতে পেয়েছিলেন বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও গুপ্তধন। তখনও হাওয়ার্ড নিশ্চিত হতে পারছিলো না এটি কি আদৌ কোনো সমাধি, নাকি পুরাতন কোনো গুপ্তধনের ভা-ার! খানিক পরেই তার নজরে পড়ে দু'টি রক্ষাকারী মূর্তির মাঝে অবস্থিত অপর একটি আবদ্ধ দ্বার- এ আবদ্ধ দ্বারটিই হাওয়ার্ডের মনে আশা জাগিয়ে ছিলো। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলে পেছন থেকে ক্যানাভেন প্রশ্ন করে, "তুমি কি কিছু দেখতে পেয়েছো?" জবাবে বললে হাওয়ার্ড বিখ্যাত সেই শব্দসমূহ, "হ্যাঁ, অত্যাশ্চর্য সামগ্রী।" পরবর্তী সময়ে তুতেনখামেন সম্পর্কিত যে সমস্ত গ্রন্থ হাওয়ার্ড কার্টার রচনা করেছিলেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, "প্রথমে আমি দেখতে পাই নি কিছুই। কক্ষের ভেতর থেকে আগত তপ্ত বায়ুর প্রভাবে মোমবাতির শিখা হঠাৎ হঠাৎই জ¦লে উঠছিলো আরও তীব্রভাবে। যখন আমার চোখগুলো ধীরে ধীরে সে আলোর সাথে গড়ে তুলতে সমর্থ হলো মিতালী, তখন আমার যুগল চোখে আবছায়া থেকে ক্রমেই কক্ষের সকল কিছু প্রতীয়মান হতে লাগলো- আমি দেখতে পেলাম অদ্ভুত সব প্রাণী, মূর্তি সমূহ ও স্বর্ণ...সকল জায়গায় থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছিলো স্বর্ণের দ্যুতি।"
প্রথম প্রবেশদ্বার থেকে অধোগামী সংকীর্ণ গলি পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় দ্বিতীয় প্রবেশদ্বারের নিকটে। এ সংকীর্ণ গলিটি চুনাপাথরের টুকরো দিয়ে পূর্ণ করে রাখা হয়েছিলো, যাতে কবর লুণ্ঠনকারীরা সহজে দ্বিতীয় দ্বারের কাছে পৌঁছাতে না পারে। দ্বিতীয় দ্বার দিয়ে প্রবেশ করার পরই হাওয়ার্ড কার্টার সাক্ষাত পেয়েছিলো প্রায় সাতশ সামগ্রীর। এসব সামগ্রীর ভেতরে ছিলো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পর্কিত তিনটি বিছানা, ঘোড়ায় চালিত চারটি চ্যারিয়েট- সম্ভবত এ চ্যারিয়টগুলোর একটি শিকার, একটি যুদ্ধ ও অপর দুইটি সামরিক প্রদর্শনীর সময়ে ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া পাওয়া গিয়েছিলো এক বিশালাকৃতির সিন্দুক যার ভেতরে ছিলো সেনাবাহিনীর জিনিসপত্র ও ১৩০ টি ওয়াকিং স্টিকস।
রেনেসাঁসেরও বহুকাল আগ হতেই মিশরে ছিলো চিত্রকলার বিস্তার। বিভিন্ন দেবদেবীর চিত্রকর্ম ও বুক অফ দ্য ডেটে সংকলিত স্পেল দিয়ে চিত্রায়িত তুতেনখামেনের ব্রুয়িলাল চেম্বার সে চিত্রকলারই এক নিদর্শন- এ চেম্বারের ভেতরকার ঐশ্বর্য ও গুপ্তধন অজ¯্র জাতিকে আজ অবধি সম্মোহিত করে রেখেছে। এ বুরিয়াল চেম্বারের প্রায় সম্পূর্ণটা দখল করে রেখেছিলো যে চারটি বৃহদাকার স্বর্ণাবৃত কাঠের বাক্স, তাদের ভেতরেই পরিবেষ্টিত ছিলো ফারাও তুতেনখামেনের শবাধার- আর পরিবেষ্টিত এ শবাধারকে চারদিক থেকে পাহাড়া দিচ্ছিলো চারজন দেবীঃ আইসিস, নেপথিস, সারকেট, নিথ। এই শবাধারের ভেতরে তিনটি মমি আকৃতির কফিনে সংরক্ষিত ছিলো তুতেনখামেনের মমি করা দেহ- এ তিনটি মমি আকৃতির কফিনের প্রথম দুইটি যেখানে স্বর্ণাবৃত কাঠের ছিলো, সেখানে তৃতীয় কফিনটি ছিলো সম্পূর্ণ স্বর্ণের। হাওয়ার্ড যখন তৃতীয় কফিনটির ভেতরে শায়িত থাকা তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কার করলেন, তখন দেখতে পেলেন বুক অবধি বিস্তৃত স্বর্ণের মুখোশ দ্বারা তা আবৃত করা। তুতেনখামেনের মুখচ্ছবির ন্যায় এ মুখোশটি স্বর্ণ ছাড়াও ল্যাপিস লাজুলী, কার্নেলিয়ান, কোয়ার্টজ, অবসিডিয়ান সহ নানা রকন মূল্যবান রতœ ও পাথর দিয়ে অলংকৃত করা ছিলো।
অ্যান্টিচেম্বার, বুরিয়াল চেম্বার ছাড়াও তুতেনখামেনের পরবর্তী জীবনে যাতে খাদ্য সহ অন্য কিছুর অভাব না হয়, সেজন্যে ছিলো ট্রেজারি ও অ্যানেক্স নামে অভিহিত দু'টি কক্ষ। সব মিলিয়ে এ চারটি কামরায় ৫০০০'র অধিক সামগ্রী পাওয়া গিয়েছিলো। পরবর্তীতে এ সকল সামগ্রীর ভেতরে সবচেয়ে রহস্যাবৃত বলে বিবেচিত হয়েছিলো দু'টি ট্রামপেট(ভেঁপু)। এই ট্রামপেট দু'টির ভেতরে যেটি তামা নির্মিত ছিলো তা পাওয়া গিয়েছিলো অ্যান্টিচেম্বারে, আর খাঁটি রূপা দিয়ে নির্মিত ট্রামপেটটি পাওয়া গিয়েছিলো ভিন্ন একটি কক্ষে। পুরাতাত্ত্বিক অভিযানের ফলে তিন হাজার বছরের অধিক সময় পরে মিশরীয় দেব-দেবী ও সামরিক অভিযানের দৃশ্য খোদিত করা ট্রামপেট দু'টির 'পরে পতিত হয়েছিলো আলো। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে যাতে ট্রামপেট দু'টি নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্যে এদের ভেতরে স্থাপিত করা হয়েছিলো ট্রামপেট আকৃতির চিত্রায়িত উডেন কোর।
রেক্স কিটিং নামের একজন রেডিও উপস্থাপক ও ডকুমেন্টারি প্রস্তুতকারী ১৯৩৯ সালে ট্রামপেট দু'টি সম্পর্কে জানতে পেরে তৎকালীন মিশরীয় রাজা ফারুক ও হাওয়ার্ডের পুরাতাত্ত্বিক অভিযানের সময়কার একজন সদস্যের সাথে সাক্ষাৎ করেন। রেক্স কিটিং তাদের বুঝাতে সমর্থ হন যে যদি এ ট্রামপেট দু'টির ধ্বনি রেডিওর মাধ্যমে সম্প্রচারিত করা যায়, তবে তা বিশ্বব্যাপী তুতেনখামেনের সমগ্র বিষয়াদিকে আরও একবার তীব্রভাবে প্রজ¦ালিত করে তুলতে পারবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তুতি চলতে থাকে। হুজার রেজিমেন্টের এক ঐকতান বাদক প্রস্তুতির সময়ে যখন তামা নির্মিত ট্রামপেটটি বাজায়, তখন তা কাণ বিদীর্ণকারী ধ্বনির সৃষ্টি করে। অঘটনের শুরু তখন থেকেই যখন ঐ ঐকতান বাদক একটি আধুনিক মাউথপিস সিলভার ট্রামপেটের প্রান্তদেশে প্রবেশ করিয়ে তাতে ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে ফুঁ দেন, আর সাথে সাথে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। অন্যদিকে হাওয়ার্ডের পুরাতাত্ত্বিক অভিযানের সদস্য আলফ্রেড লুকাস স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে রেডিওর সামনে বসে যখন অভিযান সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেন, তখন এমনই উন্মাদ প্রায় হয়ে ওঠেন যে তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
ইতোমধ্যে সিলভার ট্রামপেটটি যখন পুনঃসংস্কার করা হয়ে যায়, তখন সে অসফল বাদকের পরিবর্তে জেমস টেপের্ন নামক অপর এক বাদককে নিয়োগ দেয়া হয়। দ্বিতীয় সম্প্রচারের আগে প্রেস মিডিয়া থেকে শুরু করে সকল রকম প্রচার মাধ্যম এ নিয়ে বার্তা প্রকাশ করতে থাকেন। অতঃপর দ্বিতীয় সম্প্রচারের সময়ে ট্রামপেট দু'টিতে পরপর ফুঁ দেবার সাথে সাথে কায়রো মিউজিয়ামের সকল বাতি বন্ধ হয়ে যায়। সকল চেষ্টার পরেও যখন বাতি জ¦ালানো সম্ভব হলো, তখন মোমবাতির আলোতেই
অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। অবশেষে ১৯৩৯ সালের বসন্ত ঋতুর শুরুতে বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মানুষ শুনতে পেলো জেমস টেপের্নের ফুঁয়ে ধ্বনিত হওয়া ট্রামপেট দু'টির গা ছমছমে ধ্বনি। কিন্তু কে জানতো তখন এরপর থেকেই শুরু হবে এক কালো রহস্যের শুরু। হ্যাঁ! বিট্রিশ বাদক জেমসের ট্রামপেট বাজানোর পাঁচ মাস পরই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে- আর এ যুদ্ধে বিট্রেন ও অংশগ্রহণ করে। এরপরে আবারও যখন ১৯৬৭ সালে সিলভারের ট্রামপেটটি বাজানো হয়, তার পরপরই শুরে হয়ে যায় আরব ও ইজরায়েলের ভেতরে যুদ্ধ। তখন মিশরীয় বিখ্যাত প্রতœতত্ত্ববিদদের অনেকেই বলেন যে, নিশ্চয়ই এ ট্রামপেট দু'টির সাথে জড়িত রয়েছে ডার্ক মিস্টিক্যাল ফোর্সেস কিংবা ডার্ক ম্যাজিক। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২৩ বছর পরে ১৯৯০ সালে ট্রামপেটটি ফের যখন বাজানো হয়, তার কিছুদিন পরই পার্সিয়ান উপসাগরে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। ট্রামপেট দু'টো বাজানো সম্পর্কে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপিত করা হলেও, ১৯১১ সালে আবারও ট্রামপেট দু'টির একটি মনের খেয়ালে বাজিয়ে ফেলেন কায়রো মিউজিয়ামের একজন কর্মচারী। কি আর হবে...সে একই রহস্যের পুনরাবৃত্তি, মিশরে অকস্মাৎ শুরু হয়ে যায় বিদ্রোহ।
১৯১১ সালের পর ট্রামপেট দু'টি আর বাজানো হয় নি, হয়ত সকলে এতদিনে বিশ্বাস করে নিয়েছে বহুকাল পূর্বে বলা ইজপ্টোলজিস্ট খালা হাসান ও মিশরীয় পুরাতত্ত্ব বিষয়ক মন্ত্রী জাহি হেওআসের কথা, "ট্রামপেট দু'টির সাথে জড়িত রয়েছে ডার্ক মিস্টিক্যাল ফোর্সেস।"