নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় চলছে সরকারের অনুমোদনহীন প্রায় অর্ধশত স'মিল (করাত কল)। এসব মিলে সাবাড় হচ্ছে বনজ, ফলজসহ নানা প্রজাতির গাছ। অভিযোগ রয়েছে বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছেন ওই মিল মালিকদের কাছ থেকে। এতে করে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। শুধু তাই নয় সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠা ওইসব করাতকলের শব্দদূষণের ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দা উপজেলায় প্রায় ৫০টি স’মিল রয়েছে। তারমধ্যে চারটি স’মিলের লাইসেন্স নবায়ন করা আছে। স'মিল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী কোনো স'মিল মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। আর লাইসেন্স নেয়ার পর থেকে তা প্রতিবছর নবায়ন করতে হবে।
মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন স'মিল (করাত কল) ঘুরে দেখা গেছে, মিল চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট বিধান থাকলেও মিল মালিকরা তা মানছেন না। অনেকেই ১০-১৫ বছর যাবত অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছেন স'মিল। মিলের চত্বরে মজুত রাখছেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে কাঠ কাটার কাজ। এ সময় সরকারের অনুমোদনহীন এসব অবৈধ স'মিলগুলো বন্ধ করার কোনও উদ্যোগও চোখে পরেনি।
নাজিরপুর পল্লী জাগরণ উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সোহাগ মিয়া বলেন, দিনরাত করাতকলের শব্দের কারণে ক্লাস করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত করাতগুলো সরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক লেংগুরা এলাকার এক স'মিলের মালিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের স'মিল চলছে। অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি এখনও অনুমোদন পাইনি। বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে মিল চালাচ্ছি।
কাঠ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম, সহিদ, রুক্কু মিয়াসহ অনেকে বলেন, ‘আমরা কাঠের ব্যবসা করি। এই ব্যবসা করে আমাদের সংসারের খরচ চলে। মিলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। আমরা দেখি মাঝেমধ্যে বন বিভাগের লোকজন এসে মিল থেকে টাকা নিয়ে যায়। এতে করে মিল মালিকদের আর কোন ঝামেলা হয় না।
তবে সচেতন মহল মনে করেন, এভাবে সরকারের অনুমোদন বিহীন করাত কল (স'মিল) চলায় একদিকে পরিবেশ হচ্ছে নষ্ট হচ্ছে, বন উজাড় হচ্ছে, অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া জরুরি।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা বনায়ন কমিটির সভাপতি মো. সোহেল রানা বলেন, ‘দ্রুত অবৈধ করাতকল উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।
কলমাকান্দা উপজেলা বন কর্মকর্তা রতীন্দ্র কিশোর রায় মিল-মালিকদের থেকে মাসোহারা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, অবৈধ স'মিলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।