প্রযুক্তি খাতে সফলতার মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে আরেকটি বছর। নানা করণে প্রযুক্তি সেক্টরে বিদায়ি বছরটি আলোচিত ছিল। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন, সেটা শেষ হলো বিদায়ি বছরে। এখন ২০৪১ সালের ভিশন নিয়ে কাজ চলছে। বিদায়ি বছরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ফাইভজি চালু। গত ১২ ডিসেম্বর ফাইভজির যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। নতুন একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বিদায়ি বছরে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, প্রযুক্তিতে যে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়েছে সেটা আমরা করোনা মহামারির মধ্যে বুঝতে পেরেছি। মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পরও তারা কিন্তু করোনার মধ্যে মানুষকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে গেছে। এখন সেবাগুলো নির্বিঘœ করতে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। ২০০৯ সাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল বাংলাদেশে দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়। প্রতি বছরই কিছুকিছু এগিয়েছে। তবে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ভিশন ২০২১-এর মধ্যেই দেশে ফাইভজি চালু হবে। বছরের শেষে এসে তিনি সেই প্রতিশ্রুতিও রেখেছেন। টেলিটকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হলেও নতুন বছরে পুরোদমে দেশে ফাইভজি চালু প্রস্ত্ততি নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ফাইভজির স্পেকট্রাম বরাদ্দ থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়েই কাজ চলছে। সামনের দিনে এই অর্জন ধরে রেখে আরো কিছু নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তবে বিদায়ি বছরে প্রযুক্তি নিয়ে মানুষের খারাপ অভিজ্ঞতাও হয়েছে। কলড্রপ, ইন্টারনেটে কাক্সিক্ষত গতি না পাওয়াসহ নানা সংকটে দিন পার হয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহারকারী মানুষের। এমনকি বৈশ্বিক সব রিপোর্টেও বাংলাদেশের ইন্টারনেটের গতি নিয়ে নেতিবাচক ফল এসেছে। একেবারে তলানিতে অবস্হান করছে বাংলাদেশ। ফলে নতুন বছরে এই চ্যালেঞ্জগুলো উৎরাতে হবে। শুধু এই চ্যালেঞ্জই নয়, সবাইবার অপরাধ এখন আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ফেলেছে। এটাও নতুন বছরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। দেশ সরকারি-বেসরকারি সব সেবা এখন অনলাইনে। আর্থিক খাতকে সুরক্ষিত রাখতে মনোযোগ দিতে হবে সাইবার নিরাপত্তায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে হতে পারে আমাদের। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা মানুষকে যে ভিশন দেখিয়েছিলাম, সেটা আজ বাস্তব। সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা সর্বোচ্চ প্রস্ত্ততি নিয়েছি। আইসিটি বিভাগের ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সাইবার হামলা ঠেকাতে তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।’ দেশ যত ডিজিটাল হচ্ছে, সাইবার হামলার শঙ্কাও বাড়ছে। গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্হা ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে একাধিকবার সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে সরকারি একটি সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা তো এখন সবকিছুই ডিজিটালাইজেশন করে ফেলেছি। ফলে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকি যে আছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। যে কেউ এখন এটা হ্যাক করতে পারলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উলট-পালট করে ফেলতে পারে। এমনকি টাকাও চুরি করে নিয়ে যেতে পারে। আসলে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যম নিয়ে আমরা অনেক বেশি ব্যস্ত সময় পার করছি, আসলে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়েও অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার। সরকার এখন সেদিকে নজর দিচ্ছে। নতুন বছরে সেটা হবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি যাওয়ার ঘটনার পর বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানই নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা এখন পর্যন্ত কতটা জোরদার করা গেছে? জানতে চাইলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘সিকিউরিটি সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্ত্ততি নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ প্রস্ত্ততি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল সেখানে একটা বড় ধরনের ঘাটতি আছে। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে।’ এখন আর শুধু বেসরকারি সেবা নয়, সরকারি সব সেবাও মিলছে অনলাইনে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হতো যে কাজে সেই জমির পর্চাও মিলছে অনলাইনে। জন্ম-মৃত্য নিবন্ধন, ই-নামজারি, পাসপোর্টের আবেদন থেকে শুরু করে সবকিছুই মিলছে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে। ঢাকার বাইরে তিন হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। সেখানে ২৭০টিও বেশি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। দেশে এখন ১০ কোটি মানুষ মোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদেন করছে। দেশের এখন এমএফএসে অ্যাকাউন্ট প্রায় ১২ কোটি। এর মধ্যে সক্রিয় একাউন্টের সংখ্যা ৫ কোটির বেশি।