ঠিকমতো খাবার চিকিৎসা কোনটিই জোটে না। সারাবছর বিথী, যুথী, আলামিন, রসুলদের অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। ৪ ভাই বোনের মধ্যে ৩ ভাই বোন প্রতিবন্ধি। আর ছোট বোন যুথী এখনও সুস্থ। এমন অবস্থায় বাবা আবদুল হাকিমের চায়ের দোকানের রোজগারই একমাত্র সম্বল। বাবার স্বল্প আয়ের সংসারে অত্যান্ত মানবেতর জীবনযাপন যুথীদের। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের বনখির্দ্দা গ্রামে।
পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, ৪ ভাই বোনের মধ্যে বিথী বড়, মেজো আলামিন, সেজো যুথী আর ৪ বছরের রসুল সবার ছোট। তাদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ে যুথী। সন্তানদের জন্য হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বাবা আবদুল হাকিম। আর মা নেছারন বেগমের প্রতিবন্ধি ৩ সন্তান পরিচর্যা ও সারাক্ষণ নজরে রাখতে রাখতে নিজেও অসুস্থ পয়ে পড়েছেন। নিজেদের জীবনের ওপর দিয়ে যতই কষ্ট হোক না কেন কলিজার টুকরো সন্তানদের জন্য তাদের যেন কোন ক্লান্তি নেই। দরিদ্র পরিবার হলেও সম্পদ বলতে যা ছিল তার প্রায় সবই শেষ। তারপরও তাদের বাবা মায়ের বিশ্বাস উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেলে তাদের বুকের ধন সন্তানেরা ভালো হয়ে যাবে।
সরেজমিনে বনখির্দ্দা গ্রামে গেলে দেখা যায়, ছোট ভাই আর ২ বোন বাড়ির মধ্যে যে যার মতো বসে আছে। আর মানসিক প্রতিবন্ধি বড় ভাই আলামিন বাড়ির সামনের রাস্তায় পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। তারা কি বলতে চাচ্ছে তা বোঝার উপায় নেই। তেমনি চলাফেরা, আচরণ, অঙ্গ-ভঙ্গি এক একজন মানসিক প্রতিবন্ধির মতোই। বাবা আবদুল হাকিম জানান, মানুষের কষ্টের একটা শেষ আছে। কিন্তু আমার নেই। প্রতিদিন ছেলে মেয়েদের পেটের খাবার যোগাতে বাড়ি থেকে ৮ কিলোমিটার বাই সাইকেলের ওপর ভর করে কালীগঞ্জ শহরে আসতে হয়। সেখানে একটি ছোট চায়ের দোকানে সারাদিন চা বিক্রি করি। দিনভর রোজগারের টাকায় চাল-ডাল কিনে আবার সেই সাইকেল চেপে রাতে বাড়ি ফিরি। পরের দিন সাত সকালে আবার রওনা দিই। এভাবে চলে আমার জীবন।
তিনি আরও জানান, বড় মেয়ে বিথী জন্মের পর সুস্থ ছিল। কষ্ট করে এসএসসি পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। তার দুটি সন্তান ও রয়েছে। কিন্তু জামাইয়ের সঙ্গে বনিবনা না থাকায় প্রায় সে ৪ বছর ধরে মানসিক ভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে সে। বড় ছেলে আলআমিন জন্মের পর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধি। সে প্রতিবন্ধি ভাতা পায়। ছোট ছেলে রসুলও মানসিক প্রতিবন্ধি। সন্তানদের মধ্যে মেয়ে যুথী কিছুটা সুস্থ থাকলেও মাঝে মধ্যে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
আবদুল হাকিম জানান, বাবা হয়ে নিজের কাছেই মাঝে মধ্যে খারাপ লাগে। পয়সার অভাবে কলিজার টুকরো সন্তানদের ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারিনি। সম্পদ বলতে যা ছিল বড় ছেলে আলামিনের পেছনে ব্যয় করে নিঃস্ব প্রায়। এখন তাদের চিকিৎসার হাল ছেড়েই দিয়েছেন। তারা বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই ধুঁকছে।মা নেছারন বেগম জানান, সন্তানদের জন্য নিজের কথা ভাবতে পারিনি। বর্তমানে ৮ সদস্যের বড় সংসার। নিজের প্রতিবন্ধিধ সন্তান হওয়ায় তাদের সামলাতেই আমার জীবন কাটে। বাড়িতে থেকে সারাদিন তাদের নজরে রাখতে হয়। একঘেয়েমি জীবনে সন্তানদের জন্য কোথাও যেতে পারি না। নিজের গর্ভের সন্তান বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছে। আবার অভাব আমাদের নিত্যসঙ্গী। একজন মা হিসেবে এটা সহ্য করতে পারি না। বনখির্দ্দা গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হোসেন জানান, হাকিমের পরিবারটি অত্যান্ত অসহায়। ৪টি সন্তানের মধ্যে ৩টি সন্তান এখন প্রতিবন্ধি। অনেক কষ্টের জীবন তাদের। তাদের বাবা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন ভোরে রোজগারের আশায় শহরের রওনা দেন। কোন রকমের ক্লান্তি তাকে কাবু করতে পারে না।