কথায় আছে, ‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’। যশোর জেলার পাশে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে খেজুরের রস থেকে উৎপাদিত গুড়ের বিশাল হাট বসে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে সোম ও শুক্রবার প্রচুর খেজুরের গুড় ও পাটালি বিক্রি হয় এখানে। এ অঞ্চলের মধ্যে এটি এখনও টিকে আছে। এই হাট এখানকার একটি ঐতিহ্য। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছিরা (কৃষক) তাদের উৎপাদিত খেজুর গুড় ও পাটালি বিক্রির জন্য এখানে নিয়ে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালীগঞ্জের গুড় সারাদেশে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাই মোকামিদের কাছে কালীগঞ্জের এই হাট ব্যাপক ভাবে পরিচিতি পেয়েছে। বড় বড় মোকামিরা ঠিলে (মাটির হাড়ি) থেকে গুড় ঢেলে ড্রামে ভরে নিয়ে যান। ট্রাক, ভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসব গুড় চলে যাচ্ছে কুষ্টিয়া, বাঘারপাড়া, ভাঙ্গা, খুলনা, ঢাকা,বরিশাল,ফরিদপুরসহ দেশের অন্যান্য জেলা ও উপজেলা শহরে। কুষ্টিয়ার শালদহ গ্রামে মহির উদ্দীন, মোতালেব মিয়াসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বাজারে কালীগঞ্জের গুড়ের অনেক চাহিদা। তাই প্রতি সোম ও শুক্রবার কালীগঞ্জে মোকাম করতে আসেন তারা।
মোতালেব মিয়া ৪৭ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রতি বছর কালীগঞ্জের হাটে গুড় কিনতে আসেন তিনি। ৮ থেকে ৯ কেজি ওজনের এক ঠিলে (হাড়ি) গুড় কিনতে লাগে ১২শ থেকে ১৬ টাকা। এখান থেকে গুড় কিনে ১৮,শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে দুরদুরান্ত শহরে পাইকারি ও খুচরামূল্যে বিক্রি করেন তিনি। ৩৬ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসা করছেন মহির উদ্দীন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহত্তম যশোর অঞ্চলের মধ্যে সাতমাইল, বারবাজার, ডাকবাংলা ও কালীগঞ্জে খেজুর রস দিয়ে বানানো গুড়ের হাট বসে। এর মধ্যে কালীগঞ্জের খেজুর গুড় ব্যাপক প্রসিদ্ধ বলে জানান তিনি। তার কথায়, ‘এখন কালীগঞ্জ ছাড়া অন্যান্য স্থানে তেমন ভাবে খেজুর গুড় ওঠে না। কালীগঞ্জের মোকামটি এখনও বড়। তাই প্রতি শুক্রবার এখানে গুড় কিনতে আসি।’
শুক্রবার হাটে ১০৩ ঠিলে (হাড়ি) গুড় কিনেছেন ব্যবসায়ী সঞ্জীব কুমার। তিনি জানান, কালীগঞ্জের হাটে চট্রগ্রাম, বরিশাল, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহর থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা গুড় কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। তবে হতাশার কথা শোনা গেলো তার মুখে, ‘দিন দিন খেজুর গুড়ের হাট হারিয়ে যাচ্ছে। এখনকার হাটে আগের মতো গুড় উঠছে না। এ কারণে দূর,দুরান্তের মোকামিরা এখন আর আগের মতো আসেন না। ক্রমান্বয়ে কালীগঞ্জ হাটে গুড় পাটালির আমদানি কম হচ্ছে।
হাট মালিকরা ও বলছেন ইটভাটা মালিকরা খেজুর গাছ কিনে পুড়িয়ে ফেলছেন। অনেক গাছি গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই এখন আর আগের মতো হাটে গুড় আসছে না। তবে কালীগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট এখনও টিকে আছে। বাজারটি এখানকার একটি ঐতিহ্য বলে জানান তিনি।