কিশোরগঞ্জের নিকলী সদর ইউনিয়নের নগর গ্রামের শায়লা আক্তার একজন সফল উদ্যোক্তা। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করা যুবতী শায়লা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ থেকে ব্লক বাটিকের ও নিকলী মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন গ্রামের হতদরিদ্র ও আত্ম প্রত্যয়ী বালিকা তরুণী-যুবতী মহিলাদের হাতে কলমে কাজ শিক্ষা দিয়ে আত্ম নির্ভরশীল করে তুলছেন। তিনি এখন বেকার যুবতী মহিলাদের কাছে আদর্শের নাম। নবম শ্রেণীতে পরাকালীন সময়ে শায়লার বড় আপু যখন কুশিকাটা (সুই-সুতোর) কাজ করত তখন কাজগুলো দেখতেন এবং শিখতেন। সেই থেকেই তার আগ্রহ জন্মে ওই কাজের প্রতি। এসএসসি পরীক্ষা দেবার পর অবকাশকালীন সময়ে কিছু ওয়ালমেট তৈরী করেন নিজের জন্য ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য। সেই সময় সখের বশে মাটি দিয়েও নানান জিনিস তৈরী করতেন। তারপর গুরুদয়াল সরকারী মহাবিদ্যালয়ে উচ্চমাধ্যমিকপাস করার পর আল-ইকরা কিন্টারগার্ডের স্কুলে চার্জ গ্রহণকালীন সময়ে তিনি নিজের জন্য একটি ড্রেস তৈরী করেন। তখন আত্মীয় বান্ধবী ও পরিচিতজনদের বিনে পয়সায় জামাতে বিভিন্ন ডিজাইন করে দিতেন। তার হাতের কাজ দেখে বিভিন্ন লোকজন আগ্রহ দেখায় এবং কাজের ওর্ডার দেন। তখন তিনি ভাবলেন আমি যদি এইসব কাজ তৈরী করি তো আমার পরিবার কি ভাববে। মোদ্দাকথা তার পরিবার চাইতোনা এই কাজকে পেশা বেঁছে নিক। স্নাতক পরাকালীন সময়েও জামাতে কুশিকাটা কাজ করতেন। তখন পাড়া পড়শীরা তাকে বলতো তোমার তো বাবার অনেককিছু আছে, তুমি কেন হাতের কাজ কর? তখন তিনি বলতেন, আমার বাবার অনেক থাকুক, আমার তো কোন পরিচয় নেই, আমি আমার নিজের পরিচয়ে বাঁচবো। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, তিনি প্রতিদিন বিকেল বেলায় জামাতে কুশিকাজ করতাম। এলাকার অনেক মুরব্বি লোক আমার কাছে এসে থাকতো আবং দেখতো আমি কিভাবে কাজগুলো করি। তখনকার সময়ে আমার কাছে প্রচুর অর্ডার আসে। ২০১২ সালের ঘটনা আমি একটা ড্রেসের ডিজাইন করি। আমাদের পাড়ার একটি মেয়ে এই ড্রেসটির একটি ভিডিও তৈরী করে তার এর আত্মীয় ভিয়েনাতে থাকে তার কাছে পাঠায়। ঐ ভিয়েনাত প্রবাসী আমার কাজ দেখে আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে অর্ডার দেয়। তখন আমি আত্ম প্রত্যয়ী বেকার যুবতী ও মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেই। আমার কাছে ২০-৩০ জন মেয়ে বুটিকের প্রশিক্ষণ নিয়ে সাবলম্বী হয়েছেন। দশম শ্রেণিতে পরে এমন একটি হতদরিদ্র মেয়ে একদিন আমাকে বললো, আমাদের সংসারে তো টানপূরণে চলছে। তুমিতো অনেক কাজ শিখাও। আমাকে যদি কাজগুলো শিকাতে। আমার ভালো লাগলো, আমি তাকে কাজ শিখিয়ে দেই। এখন সে পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে জামাতে বিভিন্ন ডিজাইনের কাজ করে নিজের খরচ মেটায় এবং পরিবারকে সহযোগীতা করে। আমাদের পাড়ায় অনেক মেয়েরা অবসরে মোবাইল নিয়ে নড়াচড়া করতো এখন তারা আমার কাছে পড়ালেখার অবসরে বুটিকের কাজ করে। তারা আমার অর্ডারের কাজগুলো পারিশ্রমিকের বিনিময়ে করে যায়। আমি ডিজাইন করি এবং ম্যাচিং করে দিই তারপড় তারা এইগুলো করে। সমাজের অনগ্রসর মহিলারা আমার কাছে কাজ করে। আর এর আয় থেকে তাদের জীবিকার প্রয়োজন অনেকটা মেটে। আমিও চেষ্টা করি তাদের কাজ করে দিতে। তিনি আরো বলেন, আমি গ্রামের মানুষ, গ্রামের মানুষের যোগ্যতা আছে সেটাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। আমার কথা হলো একটি মেয়েলোকের সবদিক থেকে একটিভ থাকতে হবে। আমি তাদের ভিতেরর প্রতিভাটিকে কাজে লাগাই। পড়াশোনা শেষ করার পর ভাবলাম আমি চাকরি ছাড়া আমি কি করে ঘরে বসে থাকবো। তখন আব্বার কথাগুলো আমার মনে পরে যায়। আব্বা বলতো তুমি পারবে। তখন সাত-পাঁচ না ভেবে ডিজাইনের কাজ শুরু করি। আমার একটাই ইচ্ছা, আমি অসহায় মহিলাদের পাশে দাড়াতে চাই। আার তাদের করা আর আমার ডিজাইন করা পন্য সবার দারে দারে পৌছে দিব। আমার ডিজাইন করা মালামাল বাংলাদেশে ছরিয়ে পরুক তাতেই আমার ভাল লাগবে। বর্তমানে আসপ্রিয়া ড্রিম ফেশন নামে একটি অনলাইন পেজ খোলেছি। আমি যখন আমার কাজ করা ডিজাইন ঐ পেজে পোস্ট করি তখনই ক্রেতাদের থেকে সাড়া পাই। দেশের ভিতরে ছাড়াও বিদেশ বিভুয়ে থাকা প্রবাসীদের থেকেও অর্ডার পাচ্ছি। আমি যেখানেই যেই অবস্থায় থাকি হাড় মানবো না, কুশিকাটা ও বুটিকের কাজ চালিয়ে যাবো। আমার কাছে কাজ শিখতে আসা বেকার মেয়েদের বলি তোমরা কারও দয়ায় চলবে না। নিজেদের উপার্জনে চলবে।