বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের দিক থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নগর এটি। ৬০ লাখ নাগরিকের সেবা নিশ্চিত করতে প্রধান যে তিনটি কাজÑরাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও সংস্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশকনিধন এবং সড়ক আলোকায়ন, তাতে নজর নেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে খাল ও নালায় পড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এরপরও শুধু রুটিন কাজেই দায় সারছে নগর কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ৪১টি ওয়ার্ডের বন্দরনগর চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের পুরোনো সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিও কম। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় নগরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। সামনের বর্ষা মৌসুমেও এ ভোগান্তি থেকে মুক্তির সম্ভাবনা কম। এসব সমস্যার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে খাল-নালায় পড়ে মানুষের মৃত্যু। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের কারণে বিপজ্জনক হয়ে পড়া উন্মুক্ত নালা-নর্দমা ও খালে পড়ে গত ছয় মাসের ব্যবধানে মারা গেছেন পাঁচজন।
চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্পট অক্সিজেন-মুরাদপুর সড়ক, মেরিনার্স রোড, হালিশহরের চৌচালা সড়কসহ অনেক সড়কের অবস্থা বেহাল। খানাখন্দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধুলার যন্ত্রণা। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় একাধিক কাউন্সিলর অভিযোগ করেছেন, সড়ক আলোকায়নের জন্য বাতি লাগানো হলেও তা অধিকাংশ সময় জ¦লে না। বৈদ্যুতিক বাতিগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার বৈদ্যুতিক তারও চুরি হচ্ছে নিয়মিত।
জানা যায়, ছয় বছর আগে সিটি করপোরেশনে ‘ডোর টু ডোর’ বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা চালু হলেও সেটা সাফল্যের মুখ দেখেনি। সড়কের পাশে ও নালা-খাল এবং উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মশার উপদ্রবেও অতিষ্ঠ নগরবাসী। মশকনিধনে সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ব্যবহার করে, সেটা অকার্যকর।
নাগরিকেরা যে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, সেটা আংশিক স্বীকার করে নিলেও মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এর দায় চাপিয়েছেন আগের মেয়রের ওপর। নাগরিক সেবা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে তিনি ৮০ ভাগ সফল বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র আর মেয়রের দাবির মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নাগরিক সেবা নিশ্চিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এটাই প্রত্যাশা।