দেশে সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে নির্মাণসামগ্রীর দাম। ফলে সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনার প্রকোপ কিছুটা কম হওয়ার পর দেশে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হলেও এখন সংশ্লিষ্টরা বিপাকে পড়েছে। অজ্ঞাত কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে নির্মাণশিল্পের অন্যতম প্রধান উপকরণ রডের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। খুচরা বাজারে প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮২ হাজার টাকায়। তাছাড়া নির্মাণশিল্পে ব্যবহৃত অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নির্মাণ খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে উন্নয়ন কর্মকা-ে দেখা দিতে পারে স্থবিরতা। শুধু মূল্যবৃদ্ধিই নয়, চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং পরিবহন অপ্রতুলতার কারণেও সংকট দেখা দিয়েছে। কনটেইনার সংকট, কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদন সংকট প্রভৃতি সার্বিক অর্থনীতির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি নির্মাণশিল্পও একই সংকটে রয়েছে। কারণ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রধান উপকরণের মধ্যে আছে রড, সিমেন্ট, পাথর ও ইট। ওসব নির্মাণ উপকরণের চাহিদা সামনে বাড়বে। পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণ বঙ্গের ২১টি জেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। ওই ২১টি জেলায় শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক ভবনের মতো অবকাঠামো তৈরি হবে। ঢাকার ছোট-বড় শিল্পকারখানা স্থানান্তর হবে। নতুন কারখানা হবে। আবার কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে অবকাঠামো উন্নয়নে গতি বাড়বে। তাতে অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান উপকরণ রড ও সিমেন্টের চাহিদাও আরো বাড়বে।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী ভালো মানের (৬০ গ্রেড) এক টন রডের দাম সাড়ে ৮১ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এক বছর আগে একই মানের রডের টনপ্রতি সর্বোচ্চ বিক্রিমূল্য ছিল সাড়ে ৬৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে ওই পণ্যের দাম প্রায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। আর ৪০ গ্রেডের এমএস রডের দাম এখন ৬৯ হাজার টাকা থেকে ৭৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত বছরের ওই মূল্য ছিল সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেক্ষেত্রেও দাম প্রায় ২৩ শতাংশ বেড়েছে। মূলত লকডাউনের পরবর্তী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে রডের দাম বেড়েছে। তাছাড়া জ্বালানির দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পে অনেক মেশিন ডিজেলে চালাতে হয়। তাতেও খরচ বেড়ে গেছে। মূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে প্রকল্প ব্যয়ও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। নতুবা প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিকভাবে করা যাবে না।
সূত্র আরো জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম বেড়েছে। সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কাঁচামালের দাম বাড়লেও অন্য খরচ কমিয়ে মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে। তবে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেশি বাড়লে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। আর ক্লিংকার তৈরির খরচ বাড়ায় রপ্তানিকারক পর্যায়ে যেমন দাম বাড়ছে, তেমনি জাহাজভাড়া বাড়ায় তা আমদানি মূল্যের সঙ্গে যোগ হচ্ছে। সব মিলিয়ে টনপ্রতি ক্লিংকারের দাম বেড়েছে ৪ মার্কিন ডলার বা ৩৬০ টাকা। সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালগুলোর সবগুলোই আমদানি করতে হয়। যার মধ্যে ৬২ শতাংশই হলো ক্লিংকার। গত অর্থবছরও দেশে ১ কোটি ৮৭ লাখ টন ক্লিংকার আমদানি হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের দামও বেড়েছে। আবাসন খাতে বহুমুখী সংকটের মধ্যে নতুন সংকট নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি।
এ প্রসঙ্গে রিহ্যাব ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ জানান, করোনার মহামারিকালে বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছিল আবাসন শিল্প। যদিও করোনার প্রভাব কমার পর নতুন করে নির্মাণশিল্প উজ্জীবিত হয়ে উঠছিল। তবে দাম বাড়ার কারণে সেটা কতোটা সম্ভব হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।