রাজশাহীর চারঘাটে উপজেলা প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন। দিনে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করার পর রাত হলেই শুরু হচ্ছে পুকুর খননের মহোৎসব। উপজেলা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কৌশল পরিবর্তন করে রাতের আঁধারে আম বাগানসহ তিন ফসলী জমি নষ্ট করে চলছে ধ্বংসযজ্ঞ।
আগামী বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক হারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা ও ট্রাক্টরের আঘাতে নতুন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। এ অবস্থায় যে কোনো সময় পুকুর খননকারীদের সঙ্গে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ঘটতে পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তাই দ্রুত এসব পুকুর খননকারীদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানা যায়, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে চারঘাট উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে আম, কলা, বড়ইসহ বিভিন্ন ফলের বাগান ও ফসলী জমি ধ্বংস করে খনন করা হয়েছে প্রায় শতাধিক পুকুর। কখনও দিনের বেলায় আবার কখনও রাতের আঁধারে খনন করা হয়েছে এসব অবৈধ পুকুর। স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর অভাবে রাতারাতি এসব পুকুর খনন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
তবে গত কয়েক দিন পুর্বে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় অবৈধ পুকুর খননের সংবাদ প্রকাশের পর অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার শ্রীখন্ডী বিলে অভিযান চালিয়ে মাহবুবুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার এবং সাদীপুর বিলে শামীর হোসেনকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দুদিন পর গত বুধবার নিমপাড়া বিলে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য সোহেল রানা ও তাঁর সহযোগী হুমায়ুনকে ১ লক্ষ জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়তি রানী কৈরী। ওই তিনটা পুকুরেই দিনের বেলায় জরিমানা করার পর রাতেই আবার পুকুর খনন শুরু করেছেন দন্ডপ্রাপ্তরা।
গত কয়েকদিন ধরে সরজমিনে উপজেলার শ্রখন্ডি, জয়পুর, নিমপাড়া, সাদীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকায় জমি লিজ নিয়ে সেখানে রাতের আঁধারে পুকুর খনন করছেন প্রভাবশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট। স্থানীয় কৃষকদের বাধা উপেক্ষা করে প্রভাবশালীরা ওই সকল এলাকার কৃষি জমিতে অনেকটা জোর করেই চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ পুকুর খনের কাজ। প্রশাসনকে পাহারা দিতে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসিয়ে রাখছেন পাহারাদার। যাতে করে প্রশাসনের লোক আসলেই মাটি কাটা ভ্যাকু মেশিন ফেলে পালিয়ে যেতে পারেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য রেন্টু আলী জানান, প্রভাবশালীরা রাতের আঁধারে ফসলি জমিতে পুকুর কেটে মাটি বিক্রি করছেন ইটের ভাটায়। আর এসব মাটি বহনের জন্য যে রাস্তা ব্যবহার করছেন তা ভেঙ্গে মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা।
স্থানীয় সমাজকর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসন ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকলে প্রশাসনের অন্য স্তরের লোকজন ও কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য পুকুর খননকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। অভিযানে শুধু আর্থিক জরিমানা না, জেলের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নয়তো পুকুর খনন বন্ধ হবেনা।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) নিয়তি রানী কৈরী বলেন, গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ভেকু (খনন যন্ত্র) মেশিন জব্দ করে ব্যাটারী সিজ করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে অবৈধ পুকুর খনন। সাথে আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে। এরপরেও রাতের আঁধারে পুকুর খননের সংবাদ পেলে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।