জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন গোল্ডেন এ প্লাস। অনার্স এ ভর্তি হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়েছেন ভর্তি পরীক্ষা। মেধা তালিকায় ছিলেন ২৯৬। রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ের মেরিট লিষ্টে ছিলেন ৪৪৬। আর সারা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএসটি ) ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকাতেও পেয়েছেন স্থান। অনেক কষ্টে, সাহায্যে সহযোগিতা আর সামান্য টিউশনির টাকা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হয়েছেন। কিন্তু লেখাপড়ার ব্যায় কিভাবে আসবে ? অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে নাতো লেখাপড়া? মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশের কল্যাণেউৎসর্গ করার স্বপ্ন পূরন হবে তো? এই আতঙ্কেই এখন ঘুম হয় না কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার মেধাবী মুখ রিপা খাতুনের।
ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর গ্রামের দিনমজুর, চরম হতদরিদ্র সুরুজ্জামান’র কন্যা রিপা খাতুন। শারিরিক অসুস্থতার কারণে নিয়মিত ভাবে কাজেও করতে পারেন না। খেয়ে না খেয়ে কোন রকম সংসার চলে ২ মেয়ে, ১ ছেলে সহ ৫ জনের সংসার। জরাজীর্ন জীবনে পুরানো আধা পাকা ৩ রুম বিশিষ্ট ঘরে শোয়ার চকি ছাড়া আর কিছইু নেই। টিউশনি করে পাওয়া সামান্য টাকা দিয়ে শুধু নিজের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়েছেন চরম হতদরিদ্র পরিবারের পদ্মাফুল মেধাবী রিপা। অধিকাংশ দিনকেটেছে একবেলা খেয়ে না খেয়ে।
মেধাবী রিপা খাতুন ২০১৬ সালে দামুকদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি, ২০১৮ সালে এসএসসি এবং ২০২০ সালে ভেড়ামারা সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ ৫ অর্জন করেন। স্বপ্ন ছিল ঢাকা অথবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সামর্থ্য তো নেই। পেটই চলে না সেখানে আবার লেখাপড়া। আর ঢাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া তো স্বপ্নের মতো। আল্লাহর সাহায্যে আর নিজের পরিশ্রমের ফসল হিসাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেন। অর্থের অভাবে কোচিং করতে পারেন নি। তারপরো হতাশ না হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন। গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় ২৯৬তম স্থান লাভ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও মেধা তালিকায় ৪৪৬ তম স্থান লাভ করেন। সারা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জেএসটি) পরীক্ষাতেও অংশ নিয়ে ৬৪.৭৫ নাম্বার পান।
গরীবের পদ্মফুল মেধাবী রিপা ঢাকার জীবন ব্যায় বহুল বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স এ ভর্তি হন। কিন্তু তার আতঙ্ক, লেখাপাড়ার ব্যায় কিভাবে নির্বাহ হবে। কোথায় পাবো টাকা। অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে না তো লেখাপড়া।
গোলাপনগর এলাকার শরিফা খাতুন জানিয়েছেন, চরম হতদরিদ্র রিপা। সে নিজের প্রচেষ্টায় খুব কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। ঢাকা, রাজশাহী সহ বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সে চান্স পেয়েছে। সে মেধাবী অথচ টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রশাসনিক সহযোগিতা, সরকার উদ্যোগ এবং বৃত্তবানরা তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলে সে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে।
মেধাবী রিপা খাতুন জানান, অনেক কষ্ট, সংগ্রাম আর লড়াই করে জীবন যুদ্ধে টিকে আছি। লেখাপাড়া চালিয়ে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু লেখাপড়ার খরচ কিভাবে নির্বাহ করবো সে টেনশনে আমার ঘুম হয় না। তিনি বলেন, প্রতি মাসে লেখাপড়া এবং অনান্য খরচ হিসাবে প্রায় ৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমার পরিবারের পক্ষে অত টাকা যোগাড় করা সম্ভব নয়। মাঝ পথে অর্থের অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেলে আমার স্বপ্নের অপমৃত্যু হবে। আমি চায়, লেখাপাড়া শেষ করে মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ এবং জাতির কল্যাণেনিজের জীবন উৎসর্গ করবো। ভালো একজন মানুষ হবো।