বিদ্যুত এবং ডিজেল ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে সেচ দেয়া ইরি-বোরো ধান চাষে কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যয়বহুল খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় কৃষি জমিতে সৌরশক্তির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে সৌরচালিত পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানিনির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বোরো মৌসুমে মূলত বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেয়া যে খরচ তার আধেকে চলে আসে সৌরচালিত পাম্প দিয়ে সেচে করাতে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করার লক্ষ্যে সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারসহ সৌর শক্তিনির্ভর সেচ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে বিদ্যুতের সাশ্রয়সহ ফসলের চাষাবাদ লাভজনক করা সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সৌরশক্তির মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষেতে পানি দিয়ে ইরি-বোরো ধান চাষাবাদ করা। উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের যবসেন মৌজায় ইরি-বোরো ক্ষেতে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পানি দিয়ে ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহযোগীতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যশোর ১-কিউসেক সৌরশক্তি চালিত এলএলপি স্কীমের মাধ্যমে ৪২টি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এই সৌরশক্তি নির্মাণ করা হয়েছে। যার প্রতিটি প্যানেলের ক্ষমতা ৩৯৫ ওয়ার্ড।
বাকাল গ্রামের কৃষক নাছির উদ্দিন ফকির, জীবন হালদার, বাবুল জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক সময় ইরি ব্লকে পানির সমস্যা হতো। এখন সৌরশক্তির মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষেতে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করায় চলতি ইরি-বোরো চাষাবাদে কৃষকদের কোন সমস্যা থাকবে না।
আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার দোলন চন্দ্র রায় জানান, একসাথে ৪২টি সোলার প্যানেল দিয়ে ৭.৫ অশ্বশক্তির মটার দিয়ে ইরি-বোরো ক্ষেতে পানি দেওয়া যাবে। এতে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ একর জমি চাষাবাদ করা যাবে। কৃষকরা বিদ্যুৎতের চেয়ে এই সৌরশক্তির মাধ্যমে চাষবাদ করলে অনেক কম খরচ হবে বলেও জানান তিনি। সৌরশক্তি নির্ভর কৃষি প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে সনাতন ধারণা। বিদ্যুতের লোডশেডিং, বাড়তি বিলের বোঝাসহ লো-ভোল্টেজের ভয়ে এখন ভীত নয় কৃষক। আর সেচ পাম্প চালাতেও হচ্ছে না ডিজেলের প্রয়োজন। সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে জমি ভেজাচ্ছে প্রয়োজন মতো। সনাতন পদ্ধতিকে পেছনে ফেলে সৌরশক্তি নির্ভর সেচ প্রযুক্তির দিকে ছুটছে এখন প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকরাও। দেশের ফসলের মাঠে সৌর সেচ সফলতায় মাঠে মাঠে এখন দেখা যাচ্ছে আধুনিক এই সেচ প্রযুক্তির ব্যবহার।
কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় আরো বলেন, সৌরশক্তির মাধ্যমে সেচযন্ত্র পরিচালনা করা হলে শুষ্ক মৌসুমে বিদ্যুত ও ডিজেলের বাড়তি চাহিদা অনেকাংশে দূর করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ হতে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে যখন মাঠে ফসল থাকবে না তখন এই সৌরবিদ্যুত দ্বারা ধান মাড়াই, ধান ভাঙ্গানো, ব্যাটারি চার্জসহ গৃহস্থালী কাজেও ব্যবহার করা যাবে।