বাংলাদেশের জন্য বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা। করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক করোনা শনাক্তের হার শূন্যের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। এখন আবার তা ১৪ শতাংশের ওপরে উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে এই হার। নতুন এই ঢেউয়ের শুরুতে সংক্রমণের বেশির ভাগই ছিল ঢাকায়। এখন আবার তা সারা দেশে ছড়াতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার গণপরিবহনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনসহ যে ১১ দফা বিধি-নিষেধ জারি করেছিল, কোথাও সেগুলো সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে না। বাণিজ্য মেলাসহ জনসমাগমের স্থানগুলোতে মানুষের মধ্যে নূন্যতম সচেতনতাও দেখা যায় না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা তো দূরের কথা বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পর্যন্ত পরে না। এ অবস্থায় মহামারি আরো প্রবলরূপে ফিরে আসার আশঙ্কাই করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, উন্নত অনেক দেশে প্রায় শতভাগ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বুস্টার ডোজও। এর পরও সেসব দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও করোনার নতুন ঢেউ ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে। দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ পৌনে তিন লাখে উঠেছে। আমাদের টিকা প্রদানের হার এখনো কম। বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে আরো কম। এই অবস্থায় সংক্রমণ রোধে শুধু বিধি-নিষেধ আরোপ করাটাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষ সচেতন হলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে করোনার এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও বহু মানুষের আচরণে নূন্যতম সচেতনতাটুকুও দেখা যায় না। যানবাহন, শপিং মল, হাট-বাজারে মানুষের গাদাগাদি ভিড় এবং বেশির ভাগেরই মাস্ক নেই। আন্ত নগর ট্রেনে বিধি-নিষেধ কিছুটা মানা হলেও লোকাল ট্রেনে ততটা মানা হচ্ছে না। বাস, লঞ্চের অবস্থা তো ভয়াবহ। এই অসচেতনতার কত বড় মূল্য আমাদের দিতে হতে পারে তার কিছুটা ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চাপ দ্রুত বাড়ছে। শিগগিরই আইসিইউ সংকট দেখা দিতে পারে।
এটি স্পষ্ট যে, করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতির রীতিমতো বিপর্যস্ত অবস্থা। এমন সময়ে ফের যদি মহামারি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে তাহলে হয়তো আবারও আমাদের কঠোর লকডাউনে যেতে হতে পারে। সেটি যেমন দেশের জন্য, তেমনি ব্যক্তির জন্যও অত্যন্ত করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কাজেই আমরা নিজেরা সতর্ক হব এবং অন্যান্যের সতর্ক করবো এটাই কাম্য।