কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের চান্দপুর পূর্বপাড়া ও মদিনাছপাড়া গ্রামে এক মাসে কৃষকের ৩০টি গরু মরে গেছে। অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর মুখে রয়েছে বহু গরু। অনেক দরিদ্র কৃষকের একাধিক গরু মরে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এখনো উপযুক্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় বাড়ছে আতংক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার চান্দপুর পূর্বপাড়া গ্রামের শফিক মিয়ার একটি নয় মাসের গর্ভবতী গাভী মরে যায়। একই দিন মোশারফ মিয়ার ১টি গরু মরে যায় এবং আরো ৩টি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাছাড়া গত এক মাসে চান্দপুর পূর্বপাড়া ও মদিনাছ পাড়া গ্রামের জজ মিয়ার ৩টি, রমজান মিয়ার ২টি, মস্তোফার ২টি, আবদুল হাইয়ের ২টি, স্বপন মিয়ার ২টি, আবুল হোসেন, মাসুদ মিয়া, বাক্কার মিয়া, রতন মিয়া, গোলাপ মিয়া, মনির মিয়া, আবদুল আজিজ, ইয়াছিন মিয়া, আলম, শাহীন, করিম, আসাদ, হারুন, সাদ্দাম, তাহের, লিটনের ১টি করে গরু মারা যায়। এ ছাড়া এলাকার অনেক কৃষকের গরু অসুস্থ আছে এবং প্রতিদিনই নতুন করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে ১ জানুয়ারী থেকে ১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত বিষক্রিয়ায় ১৭টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। তবে এলাকাবাসী জানান এক মাসে অন্তত ৩০টি গরু মারা গেছে।
এ দিকে অজ্ঞাত রোগে গরু মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস ও হাসপাতালের ডা. জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্য ও কটিয়াদী উপজেলা ভ্যাটেনারি সার্জন ডা. নাছির উদ্দিন মুন্সির নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মৃত ও আক্রান্ত গরুর নমুনা সংগ্রহ করে গত ০৪ জানুয়ারী পরীক্ষার জন্য চীফ সায়েন্টিফিক অফিসারের কার্যালয়, ঢাকায় প্রেরণ করেছেন। গত ১০ জানুয়ারী চীফ সায়েন্টিফিক অফিসারের কার্যালয় ল্যাব এর রিপোর্টে ওই এলাকার খড় ও পানিতে অতিমাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়ায় যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আক্রান্ত এলাকায় জন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে শিল্প কারখানা এলাকা এবং এর আশপাশের পরিবেশে উৎপাদিত/প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গো খাদ্য ও পানি পরিহার এবং গোবাদি পশুর মাঝে বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এলাকার মস্তোফা কামাল নান্দু জানান, গরীব কৃষক ২-৩টি গাভী লালন পালন করে তাদের সংসার চলতো। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের গরু গুলো মরে যাওয়ায় আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে পুনর্বাসনের দাবী জানাই।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা.ওসমান গণি জানান, অজ্ঞাত রোগে গরু মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং মৃত ও অসুস্থ গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা চীফ সায়েন্টিফিক অফিসারের কার্যালয় ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পাঠাই। ল্যাব রিপোর্টে দেখা যায় আক্রান্ত এলাকায় খড় এবং পানিতে মাত্রাতিরিক্ত সীসার উপস্থিতি পাওয়ায় যায়। যে কারণে গরু মৃত্যুর সংখ্যা ও অসুস্থ হয়ে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অতিমাত্রার সীসা মানবদেহেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।