চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বন ও পরিবেশ আইন লংঘন করে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ করাত কল। বন বিভাগের যথাযথ তদারকি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব করাত কল গড়ে উঠেছে। সরকারি নিয়মনীতি না মেনে কোন ধরনের ছাড়পত্র ও লাইনেন্স ছাড়াই এসব করাত কল স্থাপন করা হয়েছে।
জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলার আওতাধীন প্রায় ৪০ টি করতকল রয়েছে। এসব করাতকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মহাসড়ক ও বনের পাশে লাইসেন্স ও ছাড়পত্রবিহীন অবৈধ করাত কল গড়ে উঠেছে। বন আইন অনুযায়ী বন বিভাগের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল স্হাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া বাজারের পূর্ব পাশে ঈদগাহ এর সামনে বাবুল মেম্বারের একটি করাত কল ও দক্ষিণ পাশে শাহজাহান কোম্পানির একটি। চারিয়া মুছার দোকান এলাকায় সেলিম কোম্পানির একটি। মইগ্যার বাজার সংলগ্ন স্হানে উত্তর পাশে কামাল কোম্পানির একটি। পশ্চিম পাশে সালাম কোম্পানির একটি। কালী বাড়ির উত্তর পাশে বালুরটাল ওয়াহিদ কোম্পানির একটি।ধলই ইউনিয়নের এনায়েতপুর বাজারের উত্তর পশ্চিম পাশে এরবান কোম্পানির একটি। তিনি রমজান মেম্বারের ছোট ভাই। পূর্ব পাশে রমজান মেম্বারের আরো একটি। এনায়েতপুর খন্ডলের ঘাঁটা সংলগ্ন এলাকায় আনোয়ার কোম্পানির একটি। পাশাপাশি ব্রিকফিল্ড রাস্তার মাথায় জহুর কোম্পানির একটি। এরপাশে মোহাম্মদ আলী কোম্পানির আরেকটি। সোনাইকুল মহিউদ্দিন কোম্পানির একটি। কাটির হাট বাজারের আগে মাহবুব কোম্পানির একটি। এবং বাজারের পূর্ব পাশে শাহজাহান কোম্পানির একটি।ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন এলাকার মুহুরী ঘাঁটা মঞ্জু মেম্বারের একটি। নোয়াহাট বাজার রাস্তার পূর্ব পাশে এহসান কোম্পানির একটি। পাশাপাশি মনা সওদাগরের আরেকটি।নাজিরহাট নতুন রাস্তার মাথায় আমু কোম্পানির একটি। পাশাপাশি করিমের ভাই রনিয়ের আরো একটি। নাজিরহাট ব্রিজের দক্ষিণ পাশে হালদার পাড় ইউসুফ চৌধুরী বাড়ি সড়কে মানিক কোম্পানির একটি এবং নাজিরহাট পুরাতন বাজার শামীম কোম্পানির দুইটি সহ হাটহাজারী পৌরসভার
সুবেদার পুকুরপাড়, হাটহাজারী রেল ষ্টেশনের দক্ষিণ পার্শ্বে, ইছাপুর, নন্দীরহাট, আমান বাজার, মদুনাঘাট, শিকারপুর ইউনিয়ন এলাকায় রয়েছে বহু অবৈধ করাত কল।
স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাব ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজরধারী না থাকায় এ উপজেলায় এসব অবৈধ করাত কল পরিবেশ আইন শৃঙ্খলা করে গড়ে উঠেছে। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বনাঞ্চল। অবৈধ করাত কল গুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান না থাকায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন কল মালিক বলছেন, মিল চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এরমধ্যে এক দপ্তর থেকে অনুমোদন পাইলেও অন্য দপ্তর থেকে অনুমোদন পাওয়া যায় না। স্হানীয় বন বিভাগের সাথে দফারফার মাধ্যমে গোপন সমঝোতা করে করাত কল গুলো চালানো হচ্ছে। এজন্য বন বিভাগকে মাসিক / কিংবা সাপ্তাহিক নজরানা দিতে হয়। অবশ্য বন আইন অনুসারে এই উপজেলায় যেসব স্হানে করাত কল স্হাপন করা হয়েছে সেখানে কোন অবস্থায় করাত কল করা যাবে বলে ও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে হাটহাজারী রেঞ্জ বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, হাটহাজারীতে কিছু করাত কলের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। করাত কলের অনুমোদন থাকলেও মেয়াদ নাই এবং অবৈধ করাত কল গুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। মাসোয়ারার মাধ্যমে করাত কল পরিচালিত হচ্ছে এমন প্রশ্ন গণমাধ্যম কর্মীদের পক্ষ থেকে করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল আলম বলেন, করাতকল চালানোর কাগজপত্রের বৈধতা যাচাই বাছাই করা হবে এবং অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।