নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করলেন। গত সোমবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ। মাসব্যাপী চলা এই সংলাপে প্রায় সব দলই আইন প্রণয়নের কথা বলেছে। সংলাপের শেষ দিন গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব প্রক্রিয়া শেষ করে আইনটি কার্যকর করা হবে। একই দিন নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের একটি খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৩ সালে। এখনো প্রায় দুই বছর বাকি থাকলেও নির্বাচনের পালে একটু একটু করে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে হবে।
গত সোমবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২’ চলমান ষোড়শ অধিবেশনেই উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আগামী রোববার বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হবে। এই সংসদে আইনটি পাস হবে। এ আইনের অধীনেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।’
এটি এখনো স্পষ্ট নয় যে, আইন পাস হলেই নির্বাচন কমিশন গঠনে সব রাজনৈতিক দল একমত হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এতটাই প্রবল যে তেমন সমঝোতায় পৌঁছা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। শুধু মতপার্থক্য নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অসহিষ্ণুতাই এখন নতুন সংকট।
স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রায় সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের যথাযথ ভূমিকার ওপর। এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনের দিক থেকে আমাদের নির্বাচন কমিশনও অনেক শক্তিশালী ও স্বাধীন। তার পরও আমাদের নির্বাচন কমিশন তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না কেন? বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম এমন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কমিশনে আনাই হয় না।
আমরা জানি যে, সংসদে কোনো বিল উত্থাপিত হলে সাধারণত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। সে জন্য কমিটিকে সময় দেওয়া হয়। সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন আসার পর সংসদে তা নিয়ে আলোচনা শেষে পাস হয়। তবে দ্রুত আইন পাসের নজির আমাদের দেশে আছে। ক্ষমতাসীন সরকার আবারও সেই নজির স্থাপন করবে এটাই প্রত্যাশা।