করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই যেন উচ্চ ঝুঁকিতে পড়েছে বিভাগীয় শহর রাজশাহী। চলতি বছরের শুরু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা বিভাগটি এরমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষিত হলুদ থেকে লাল জোনে প্রবেশ করেছে। এরপরও বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বেড়ে চলেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে সংক্রণের হার বাড়লেও আপাতত সেভাবে রোগটিতে মৃত্যু বাড়েনি। রোববার (২৩ জানুয়ারি) সকালে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য মতে, বর্তমানে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রাজশাহীতে সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ছিল ২৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে যে কোন সময় ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর সবশেষ রোববার সকালের প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।
এ তথ্য নিশ্চিত করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১০৪ শয্যার বিপরীতে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪২ জন। এরমধ্যে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন ৩০ জন। উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ১০ জন। আর করোনা ধরা পড়েনি এমন রোগী রয়েছেন দুইজন। মোট ৪২ রোগীর মধ্যে রাজশাহী জেলার ২৪ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪ জন, নওগাঁর ৩ জন, নাটোরের ১ জন, পাবনার ৫ জন, জয়পুরহাটের ১ জন, কুষ্টিয়ার ৩ জন এবং চুয়াডাঙ্গার ১ জন রোগী রয়েছেন।
হাসপাতাল পরিচালক জানান, শনিবার (২২ জানুয়ারি) রামেক হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ৯১ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৩৯ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ২৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে শনাক্ত হয়েছে ৮৮ জনের। সর্বশেষ ফলাফলে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার এসেছে ৪৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) নাজমা আক্তার জানান, হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। আর বিভাগের মধ্যে আবার রাজশাহী জেলাতেই করোনার সংক্রমণ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ কারণে এখন সকলকেই সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করতে হবে। আর মাস্ক পরাসহ সরকারি নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
আর সরকারি নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানার আহবান জানিয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। তবে এটি করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রনের প্রভাবে হচ্ছে কি না এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা নয়টি উপজেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রেখেছি। এছাড়াও রাজশাহীর সদর হাসপাতালকে ১৫০ শয্যা ও ১৫ আইসিইউ সংবলিত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুতের সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়া রামেক হাসপাতালে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।
জানা গেছে, রাজশাহীতে ওমিক্রন শনাক্তের কোনো ব্যবস্থা নেই। তারপরেও চিকিৎসকদের ধারণা, এটি করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবেই হচ্ছে। আর সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা সংকট আগের চেয়েও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরপরও সাধারণ মানুষ মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীন। তাই রাজশাহী বিভাগে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে ডেল্টা ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে গত বছর দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর মৃত্যু ও সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষে উঠেছিল ‘রাজশাহী’। সে সময় করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টে এখানে একদিনে সর্বোচ্চ ২২ জনের প্রাণহানীও ঘটেছে। তাই আগের অভিজ্ঞতায় এবারের ঢেউয়ে এমনটি যেন না হয় এমন কথা বললেও রাজশাহীতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালায় দেখা যাচ্ছে না। ফলে রাজশাহীর সচেতন মহলে আবারও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করলেও এ বিষয়ে অধিকাংশ জনসাধারন রয়েছে অন্ধকারে।
এদিকে, সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী রাজশাহীতে এ পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৮ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৮৫ জন। আর সিনোফার্ম টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৬০৬ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫ লাখ ২ হাজার ৩৩৪ জন। এছাড়াও মডার্নার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ২ হাজার ১৩৫ জন। ফাইজার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৪২ হাজার ৮২৯ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ হাজার ৬০৬ জন। বর্তমানে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে।