আশাশুনিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২ নং পোল্ডারের ডিভিশন- ১ এর মরিচ্চাপ নদীভূক্ত জমি বাদ রেখে এসএ-বিআরএস রেকর্ডীয় ব্যক্তি মালিকানাধীন ধান ও মাছ চাষের জমি খনন বন্ধ দাবীতে জানিয়েছেন জমির মালিকরা। এ ব্যাপারে রোববার (২৩ জানুয়ারী) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
বুধহাটা ইউনিয়নের কুঁন্দুড়িয়া গ্রামের মৃত অনন্ত কুমার ম-লের ছেলে আদিত্য ম-ল, চয়ন ম-ল, অজয় ম-ল, উদয় কৃষ্ণ ম-ল, রমেশ পরামান্য ও এড. গোপাল ম-ল লিখিত আবেদন ও সাংবাদিকদের জানান, মরিচ্চাপ নদী খনন কার্যক্রম চলছে কিন্তু এসএ ও বিআরএস ১নং খতিয়ানে নদীভূক্ত সম্পত্তিতে নদী খনন না করে সরকারি সম্পত্তিতে অবৈধভাবে মৎস্যচাষ করা ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের নিজস্ব রেকর্ডীয় সম্পত্তি কেটে নদী করে দিচ্ছেন নদী খননকারী কমিটি। আবেদনকারী আদিত্য ম-ল জানান, চুমুরিয়া ও কুন্দুড়িয়া মৌজার এসএ- ২০, ১২ ও ১৮ নং খতিয়ানের মধ্যে এসএ - ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ১০, ১১, ১২, ১২, ১৪, ৮৫সহ অন্য দাগের বিআরএস ৪৯ নং খতিয়ানে ৫.৪১ একর সম্পত্তি ওয়ারেশ সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে জমিতে ধান ও মাছ চাষ করে আসছি। জমির পশ্চিম পাশে নদীভূক্ত সরকারের ১ নং খাস সম্পত্তি রয়েছে। নদী ভরাটের পর পশ্চিম পাশে বসবাসকারীরা তাতে মাছ চাষ করে ভোগ দখলে আছেন। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদীভূক্ত জমিতে খনন কাজ চলবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খনন কমিটি নদীভূক্ত জমি খনন না করে পশ্চিম পাশের অবৈধভাবে দখলবাজদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে খনন কার্যক্রম চালাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে আমরা বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ইঞ্জি. আ ব ম মোছাদ্দেককে অবহিত করলে তিনি স্থানীয় মেম্বর মতিয়ার রহমানকে সরজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেন। মেম্বর তদন্ত করে দেখেন প্রকৃত নদীভূক্ত জমি খনন না করে আবেদনকারীদের (আমাদের) জমি খনন করা হচ্ছে। মেম্বরের মাধ্যমে বিআরএস জরিপের কাগজপত্র দেখার পর খনন কমিটি কিছুদিন খনন কাজ বন্ধ রাখেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার কাজ শুরু করেছেন। এভাবে চলতে থাকলে ওই জমিটুকু হারিয়ে আমাদের দেশত্যাগ করতে হবে।
সাতক্ষীরা সদরের জোড়দিয়া গ্রামের কেফায়েতুল্যাহ’র ছেলে আবদুল মান্নান জানান, জোড়দিয়া মৌজার এসএ ৩২১ এর সাবেক ১২৭৮ দাগের হাল ৪৪৯৪ ও ৪৪৯৬ নং দাগে আমাদের ২.২৩ একর ও কুন্দুড়িয়া মৌজায় ৫১ নং এসএ এর সাবেক ৭ ও ৯ নং খতিয়ানের হাল ১০৫ দাগের ১৭ নং ডিপিতে ১.২০ একর রেকর্ডীয় সম্পত্তি রয়েছে। খনন কমিটির লোকজন তাদের ফ্লাগ পোতা নিশানা পর্যন্ত না খুড়ে পশ্চিম পাশের অবৈধভাবে দখলবাজদের কাছে টাকা খেয়ে অবৈধভাবে আমার রেকর্ডীয় জমি খুড়ে নদী করে চলেছেন। আমার শত অনুরোধ না শোনায় বিজ্ঞ আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছি।
জোড়দিয়া গ্রামের হামিদ সরদারের ছেলে আকবর আলী জানান, ব্যাংদহ মৌজায় ৮১ নং খতিয়ানের ২৪৫ দাগে আমার ক্রয়কৃত ৮৩ শতক জমির ১৪২৮ সন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করে জমিতে সবজি চাষ, নার্সিং পয়েন্ট ও পাকা দোকান ঘর করে ব্যবসা করছি। খনন কমিটি বেআইনিভাবে আমার জমি খনন করে যাচ্ছেন।
এছাড়া কুন্দুড়িয়া গ্রামের শরৎ ম-লের ছেলে নিধু ভূষণ গংএর কুন্দুড়িয়া মৌজায় এসএ ১৫১ খতিয়ানের হাল ১৯৮ খতিয়ানে ২.৫৮ একর, বিহারী লালের ছেলে বিরেন্দ্র নাথ ম-লের এসএ ৫১ খতিয়ানের সাবেক ২৫৪ দাগের হাল ১০৫ দাগে ৫৫ শতক, একই মৌজায় ধ্রুবপদ পরামান্যর স্ত্রী বাসন্তী রানী এসএ ৮৩ খতিয়ানের ১৩, ১৭ সহ ১২টি দাগে ২.৫১ একর জমি, একই মৌজায় ৮৩, ৮৫, ৮৬ নং এসএ খতিয়ানে আবদুল মান্নান, গোপাল সরকার গং ও রমেশ গং এর খরিদা সূত্রে ২.৪৫ একর সম্পত্তিতে ধান ও মাছ চাষ করে আসছেন। কিন্তু খননকারীরা অন্যের কাছে টাকা নিয়ে রেকর্ডীয় জমির মালিকদের জমি খনন করে তাদের নিঃস্ব করে চলেছেন। ভূক্তভোগীরা আবেদনের অনুলিপি বিভাগীয় কমিশনার খুলনা, অতিঃ বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) খুলনা, অতিঃ জেলা প্রশাসক (এলএ) সাতক্ষীরা বরাবর প্রেরণ করেছেন।
চুমুরিয়া ও কুন্দুড়িয়া মৌজার নালিসি সম্পত্তির পাশে নদীভূক্ত জমিতে খনন না করে বেআইনীভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে নদী খনন বে-আইনি হওয়ায় নদী খনন কমিটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ওই দরখাস্তে সুপারিশ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম। একই সুপারিশ করেছেন বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জি. আ ব ম মোছাদ্দেক।
বুধহাটা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মাহাবুবুল হক ডাবলু জানান, সরজমিনে আমি নালিসি এলাকা পরিদর্শন করেছি। কাগজপত্র ও জমির ম্যাপ দেখে বুঝেছি যে নদীভূক্ত জমিতে খনন না করে নদী খনন কমিটি বা ঠিকাদারের লোকজন পশ্চিমপাশ থেকে যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রেকর্ডীয় সম্পত্তি নির্বিচারে খনন করে চলেছেন। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ ও কয়েকজন দায়িত্বরত এসও’র সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে তারা তালবাহানা করে পিছিয়ে যায়। আমি সমস্ত রকম অনৈতিক কার্যক্রম থেকে দুরে থেকে বিধি মোতাবেক নদী খনন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। স্থ’ানীয় মেম্বর মতিয়ার রহমান জানান, ২০১৯ সাল থেকে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুসহ অন্যান্যের রেকর্ডীয় সম্পত্তি রক্ষা করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এর আগেও বিষয়টি নিয়ে ১১/১২/২০১৯ তারিখে ক্ষতিগ্রস্ত ২৬৫ ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত করেছিলাম। ১৫/১২/২০১৯ তারিখে রেভিনিউ কালেক্টর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু বর্তমানে যারা কর্মরত আছেন তারা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেন না। কিছু বললেই তারা চাঁদাবাজী মামলাসহ সরকারী কাজে বাঁধা দেওয়ার মামলা করার হুমকি দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ডিভিশন - ১ এর কর্ত্যবরতরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মো. রনি এর সাথে তার ব্যবহৃত (০১৭১৪-৬৩২৩৫৮) মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।