প্রকৃতি তখনও কুয়াশার চাদরে ঢাকা। রশি টানা নৌকা দিয়ে গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় শুধুই ফুলকপির ক্ষেত। ক্ষেতে নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ক্ষেতের পরিচর্যায়, কেউ ক্ষেত থেকে কপি তুলছেন, আবার কেউ সেই কপি ভাড় দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাজারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক কাজী আবদুল হামিদ জানায়, গ্রামের সবাই সবজি চাষী। প্রতিবারের মতো এবারও অধিক লাভের আশায় সবাই ফুলকপি চাষ করেছেন। সবার মতো তিনিও দেড় বিঘা জমিতে দেশী জাতের ফুলকপি চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে উৎপাদিত কপি বিক্রি করেছেন ৪৫ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন এবার তার লাখ টাকার মতো ফুল কপি বিক্রি হবে। এই গ্রামের আরেক ফুলকপি চাষী মোঃ হোসেন মিয়া জানান, এক বিঘা জমিতে কপি চারা লাগিয়েছেন। সর্বসাকল্যে তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আশা করছেন শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হবে। কৃষ্ণনগর গ্রামের মনির হোসেন নামের এক যুবক জানায়, তিনি এবার ৫০ হাজার টাকা খরচ করে জমিতে ফুলকপি লাগান। বৃষ্টিতে কিছু চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আবারও কপির চারা রোপন করেন। তিনি আশা প্রকাশ করছেন এবার তার ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি হবে।কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম জানান, এই গ্রামে ১১২ টা পরিবার ও দুই হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় সবাই কমবেশি ফুলকপিসহ শীতকালীন সবজি চাষ করে। পরিবারের সবাই মিলে পরিচর্যা করে বলে খরচ কম ও লাভ হয় বেশি। কৃষ্ণনগর গ্রামের মেম্বার আবদুল আলীম বলেন, এই গ্রামের বেশি ভাগ মানুষই সবজি চাষী। মাটির গুনেই এখানে ফুলকপিসহ সব ধরনের সবজি ভালো উৎপাদন হয়। এখানকার ফুলকপির আলাদা সুনাম ও কদর রয়েছে।
আখাউড়া পৌরশহরেরসড়ক বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ি হারু সহা বলেন, কৃষ্ণনগর গ্রামের ফুলকপির স্বাদ বেশি, তাই ক্রেতাদের কাছে চাহিদাও অনেক বেশি।শীত মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতারা অপেক্ষায় থাকে কখন কৃষ্ণনগর গ্রামের কপি বাজারে আসবে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, কৃষ্ণনগর গ্রামের প্রায় ২০ -থেকে ৩০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়। এই গ্রামে আগামসহ তিনবার ফুল কপি চাষ হয়। তারা বীজ থেকে চারা করে পর্যায়ক্রমে সেই চারা রোপন করেন। ক্ষেতে রাসানিক সারের পরিবর্তে সবাই জৈব সার ও প্রচুর পরিমানে গোবর ব্যবহার করেন। এ ছাড়া প্রতিবছরই নদীর পলি জমিতে এসে পড়ে। এতে জমি আরো উর্বর হয়ে উঠে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, কৃষ্ণনগরে দেশীয় জাতের ফুলকপি চাষ করা হয়। এই ফুলকপি আকারে কিছুটা ছোট হলেও খেতে খুব স্বাদ। কদর থাকায় বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। ফলন ভালো হয় বলে কৃষকরাও অনেক লাভবান হয়। তিনি আরো জানান, কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়।