মাদারীপুর সরকারি কলেজ রোড এলাকায় ফুটপাতের একটি অংশ অবৈধভাবে দখল করে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা চারটি টিনসেড দোকানঘর তুলেছেন। রাতারাতি দোকানঘরগুলো নির্মাণের পরে তা ভাড়াও দিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফুটপাতের ওপর দোকানঘর থাকায় রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর সরকারি কলেজের পিছনের সড়কটি কলেজ রোড নামে পরিচিত। পৌরসভার ব্যস্ততম এই সড়কটি দিয়ে নিয়মিত স্কুল, কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থী চলাচল করে। এর জন্য সড়কটির দুপাশেই ফুটপাত রয়েছে। কলেজের পিছনের গেটের সামনে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে টিনসেড চারটি দোকানঘর তুলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক বাবু শরীফ। দোকানঘর তোলার পরপরেই দোকান প্রতি ২০ হাজার টাকা অগ্রীম নিয়ে দোকানীদের কাছে প্রতি মাসে দোকান প্রতি দুই হাজার টাকার চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছেন এই নেতা।
স্টার কফি বারের দোকানী রিফাত ফুটপাতের দোকান সম্পর্কে বলেন, ‘আমি দোকান ভাড়া নিয়েছি। ফুটপাত তো আর আমি দখল করি নাই। দোকান ভাড়া নেওয়ার আগে ২০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স আর মাসিক দুই হাজার টাকা চুক্তিতে আওয়ামী লীগ নেতা বাবু শরীফের কাছ থেকে আমি দোকানটি নিয়েছি।’
ফুটপাতে দোকানঘর তোলার বিষয় স্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক বাবু শরীফ বলেন, ‘কলেজ রোডে আরও আগে থেকেই আমার দোকান ছিল। নতুন রাস্তাটি করার সময় দোকানঘর ভাঙ্গা পড়ে। ফুটপাতের পাশে আমার জমি রাখা আছে। নতুন করে টিনসেডের দোকান করার সময় দেড় ফিটের মত ফুটপাতে ঢুকে পড়েছে। এ বিষয়টা আমি মেয়র ও কাউন্সিলরকে জানিয়েছি। কাঁচা দোকানঘর, পৌরসভার প্রয়োজনে ভেঙ্গে ফেলতে বললে ভেঙ্গে ফেলবো।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, ‘পৌরসভার সড়কের ফুটপাত দখল করে নতুন কয়েকটি দোকান তোলার বিষয়ে শুনেছি। তবে পৌরসভার বাসিন্দারা চাইলে সে যেই হোক ফুটপাত দখল করে দোকানঘর রাখতে পারবে না। বিষয়টি আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখবো।’
রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের পিছনের ফটকের সামনেই ফুটপাত দখল করে সদ্য নির্মিত চারটি টিনসেড দোকানঘর। একটি দোকানে চা-কফি বিক্রি হচ্ছে। অন্য দুটি দোকান ফটোকপি ও স্টেশনারী। একটি বন্ধ রয়েছে। পৌরসভার এই সড়কটির প্রায় একশ মিটার ফুটপাত এই চারটি দোকানের দখলে। দোকানগুলোর সামনে কাষ্টমারদের বসার জন্য চেয়ার ও টুল রাখা। ফলে ফুটপাতের প্রায় মিটার অংশে শিক্ষার্থী ও পথচারীরা ব্যবহার করতে পারছে না। তাদের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে নেমে হেটে চলাচল করতে হচ্ছে।
কলেজ রোড সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী কলেজছাত্র নাজমুল বলেন, ‘কলেজ রোডে আরও দোকান আছে। কিন্তু একটিও ফুটপাত দখল করে নাই। কয়েক দিন ধরে দেখছি, হঠাৎ করে ফুটপাতের ওপরেই চারটি দোকান। প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছি। পরে শুনি স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই দোকান ভাড়া দিয়েছে।’ কলেজের আরেক শিক্ষার্থী খুশি রায় বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে আমরা রোজই হেটে কলেজ যেতাম। এখন পথের মধ্যে দখল থাকায় ফুটপাত ব্যবহার করা হয় না। সড়কে নেমে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়।’
এ সম্পর্কে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘ফুটপাত দখল করে সাধারণ মানুষের চলাচলে কোন বাঁধা সৃষ্টি করার সুযোগ নেই। কলেজ রোডে যে ফুটপাত দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছে সেটি ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।’