দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে যা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দুর্নীতি ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপরাধগুলো বিশ্বের যেসব দেশে সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে; দেখা যাচ্ছে, সেখানে দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোই মূল ভূমিকা পালন করেছে। মানি লন্ডারিং আইনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে থাকাকালীন ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনায় দুদকের সাফল্য থাকলেও পরে এ বিষয়ে সাফল্যের আর কোনো নজির সৃষ্টি হয়নি। এ অবস্থায় দুদকের ক্ষমতা ও আইনি কাঠামো যে আরও সম্প্রসারিত করা দরকার, তা বলাই বাহুল্য। বলা প্রয়োজন, বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৭টি ‘পেডিকেট অফেন্স’ বা সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে শুধু একটির (দুর্নীতি ও ঘুষ) অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। বাকিগুলো সরকারের ছয়টি সংস্থা- সিআইডি, এনবিআর, বিএসইসি, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কাস্টমস মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত। অপ্রিয় হলেও সত্য, এসব সংস্থা বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে নজির সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস ও গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ অন্যান্য সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, সিংহভাগ অর্থই ব্যবসা-বাণিজ্য বা আমদানি-রপ্তানির আড়ালে পাচার হয়ে থাকে। দেশ থেকেও একই প্রক্রিয়ায় প্রচুর অর্থ ও সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে। বস্তুত এসব বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দুদকের হাতে ন্যস্ত না থাকায় পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারস, পেন্ডোরা পেপারস ছাড়াও অবৈধ সম্পদের অন্যতম গন্তব্যস্থল মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্প, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপরাধের অনুসন্ধান ও সুষ্ঠু তদন্ত শেষে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশে অর্থ পাচার অন্যতম প্রতিবন্ধক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশ থেকে প্রতিবছর নানাভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এর পরিমাণ ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার (এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা) ছাড়িয়ে যেতে পারে। অর্থ পাচারের এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির সফল বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় বিদেশে অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ ও পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব অপরাপর সংস্থার পাশাপাশি দুদকের ওপর ন্যস্ত হলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে, তা বলাই বাহুল্য।