নওগাঁর মহাদেবপুরে গ্রামের অপ্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণের অজুহাতে কয়েকজন সংখ্যালঘুর জমি জবর দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। ওই সংখ্যালঘুরা তাদের জমি ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছেন। গ্রামবাসীরা বলছেন, জমির মালিকেরা বাধা না দেওয়ায় তাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের দোহালী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সচিন্দ্রনাথ অভিযোগ করেন যে, সফাপুর ইউনিয়নের তাতারপুর গ্রামের লোকেরা তাদের গ্রাম থেকে বের হবার একটি অপ্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণের অজুহাতে গত ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে তাতারপুর মৌজায় তার দুই বিঘা ধানী জমি জবর দখল করে। এ ছাড়া সেখানে জোতহরি গ্রামের শ্রী পলাশ কুমার মন্ডলের দেড় বিঘা, দোহালী গ্রামের মিঠু কুমার মন্ডলের এক বিঘা, সবুজ কুমার মন্ডলের দেড় বিঘা, সুনিল চন্দ্র মন্ডলের দেড় বিঘা, সঞ্জিত কুমারের দেড় বিঘা, হরিপদ দাসের দেড় বিঘা ও আরও অনেকের জমি তাদেরকে কিছু না বলে জবর দখল করে। খবর পেয়ে সচিন্দ্রনাথ মহাদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে জমি জবর দখলকারিরা পালিয়ে যায়। কিন্তু পরে রাতের আঁধারে তারা আবার ওই রাস্তা নির্মাণ করতে থাকে।
ভূক্তভোগি মিঠু কুমার মন্ডল এ ব্যাপারে তাতারপুর গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে সুমন ও মামুন, আবদুর রহমানের ছেলে রেজাউল করিম ও আমজাদ হোসেন, মফিজ উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম ও ফজলুর রহমান, ছাফাইতুল্লাহর ছেলে আবদুল কাদের, করিম বক্সের ছেলে জাহিদুল ইসলাম, রফি হোসেনের ছেলে লুৎফর রহমান, অছির উদ্দিনের ছেলে খোকা, লক্ষণের ছেলে আবদুল ও সোলাইমান, আবদুস সাত্তারের ছেলে লিটন, হবিবর রহমানের ছেলে সাফি, হাসান আলীর ছেলে আতাবুল, আহাদ আলীর ছেলে ইয়ানুছসহ আরও একশ’ জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মহাদেবপুরÑসতিহাট পাকা সড়কের সোনার মোড় নামক স্থান থেকে একটি পাকা সড়ক কালিতলা পর্যন্ত গিয়েছে। তাতারপুর গ্রামে যাবার জন্য গ্রামের দক্ষিণে এই সড়কের মানিকের মোড় এবং এ থেকে ২০ মিটার পর পর মোট তিনটি রাস্তা রয়েছে। গ্রামের উত্তরে শিবগঞ্জ-শিবরামপুর পাকা সড়ক থেকে আরও একটি রাস্তা গ্রামের ভিতর গেছে। এই রাস্তা থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে নতুন করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে, যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। জমির মালিকেরা জানান, এই মাঠে প্রতিবিঘা জমির দাম কমপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা। সেই হিসেবে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি জবর দখল করা হয়েছে। এতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
গ্রামবাসি জানান, যুগল আগরওয়াল নামে এই গ্রামের এক মারোয়ারি ব্যবসায়ী তিন বছর আগে তার বাড়ি থেকে পাকা রাস্তায় ওঠার সোজা রাস্তা নির্মাণের জন্য মানুষের কাছ থেকে জমি কেনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু জমির মালিকেরা রাজি না হওয়ায় তখন রাস্তাটি নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি গ্রাম ছেড়ে উপজেলা সদরে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু গ্রামবাসি এখন সেই রাস্তার জমি কিনে না নিয়ে জবর দখল করলো। যুগল আগরওয়াল জানান, কিনে না নিয়ে, বা মালিকদের না জানিয়ে তাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ ঠিক হয়নি।
জানতে চাইলে অভিযুক্তদের একজন ফজলুর রহমান বলেন, জমির মালিকেরা তিন বছর আগে জমি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর দিতে রাজি হননি। রাস্তা নির্মাণের সময় তারা কেউ বাধা না দেয়ায় তাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
জমি হারিয়ে ভূক্তভোগিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা জানান, গ্রামের লোকেরা ২৪ ঘন্টা পাহারা দেয়ায় তারা তাদের জমিতে যেতে পারছেন না।
মহাদেবপুর থানার এসআই এমদাদ হোসেন জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে জমি জবর দখলের সত্যতা পেয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই কথা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন।