শিক্ষা জাতির মেরুদ-। যে জাঁতি যত শিক্ষিত সে জাঁতি ততো উন্নত। বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা অনেকটা ভালো হলেও দেশে এখনো মানসম্মত শিক্ষা প্রদান সম্ভব হয় নি। দেশে বর্তমানে ৫০টি সরকারি ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো ভাবে চলছেনা। বেসরকারি ডজন খানেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখলেও অন্যগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। তাদের বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে তৎপর হতে হবে।
গত ২৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষে গণস্বাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত ভার্চুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠানে এমন অভিমত দেন বক্তারা। শিক্ষানীতির আলোকে দীর্ঘ একদশকেও শিক্ষা আইন না হওয়ায় আক্ষেপেরও প্রতিধ্বনি হয় এ সংলাপে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণা প্রায় নাই বললেই চলে। তা ছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা পাচ্ছেন না। ফলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভিত শক্ত না হওয়ায় কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন আলোচনাও আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তির পর অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের ভাষা-গত দক্ষতার অভাব রয়েছে।
শিক্ষা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। সরকার সবাইকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করবে। তবে সরকারের সীমাবদ্ধতার কারণে তা সব সময় সম্ভাব্য না হওয়ায় বেসরকারি উদ্যোগ শিক্ষা দানের পথ প্রশস্ত হয়েছে। এজন্যে দেশে কিছু শিক্ষানুরাগী এগিয়ে এসেছেন। তবে তাদের সে উদ্যোগে শিক্ষাদান যতটা না তার চেয়ে বাণিজ্যিক উদ্যোগ বেশি বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। ফলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্র একটা স্থবিরতা বিরাজ করছে।
করোনা সংক্রমণের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি যতটা হয়েছে, তার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে। দীর্ঘ ১৮ মাস সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুললেও সম্প্রতি আবার ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যদিও বলা হচ্ছে, অন লাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সব শিক্ষার্থীর পক্ষে অন লাইনে ক্লাসে অংশ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের ফলে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া আশংকাজনক। ফলে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে অথবা পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে শ্রম বিক্রি করছে। সারা দেশে কি পরিমাণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, তার কোনো গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে এ নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাও নেই। এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ এখন বিশে^ উন্নয়নের মডেল। আর এ মডেলকে টিকসই করতে শিক্ষার বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেই শুধু নয় দেশেও জনগণের কল্যাণে-শিক্ষা ব্যবস্থাকে মান সম্মত করার বিকল্প নেই। তাই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে মান সম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণার পথ প্রশস্ত করতে হবে। আর তা যতো দ্রুত হবে জাতির জন্য ততোই মঙ্গল।