রেলপথের লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বেশ সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়শ রাজধানীর বিভিন্ন রেলক্রসিংসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লেভেলক্রসিং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু শিরোনাম হয়। গত সোমবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় নছিমনের চালক ও দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই ক্রসিংয়ে কোনো গেট বা জনবল বরাদ্দ নেই। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এই দায় এড়াবে কী করে? জনবলের অভাবÑতিনটি জীবনের মূল্য কি এই দুটি শব্দেই মিটে যাবে? অরক্ষিত রেলপথে আর কত দুর্ঘটনা ঘটবে? বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে রেলপথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন নিহত এবং ১৩৪ জন আহত হয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০২০Ñএই ১২ বছরে ৩১২টি দুর্ঘটনায় ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলের এক হাজার ১২৩ কিলোমিটার রেলপথে অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যা এক হাজার ৪৭৯টি। লেভেলক্রসিং চার ধরনের। স্পেশাল, এ, বি এবং সি ক্যাটাগরি। জাতীয় মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কের মধ্যে যে লেভেলক্রসিং পড়েছে এগুলোর মান এ প্লাস, বি প্লাস ও সি প্লাস। মহাসড়কের এ প্লাস গেটে তিনজন গেটম্যান, বি প্লাস গেটে দুজন গেটম্যান দায়িত্ব পালন করেন। কিছু লেভেলক্রসিং আনম্যানড বা অরক্ষিত। এই অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়েই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এসব লেভেলক্রসিংয়ের উভয় পাশে লেখা আছে, ‘এই গেটে কোনো গেটম্যান নাই। জনসাধারণ নিজ দায়িত্বে পারাপার হবেন। অর্থাৎ সব দায় সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে গ্রামীণ কাঁচা সড়কের বেশির ভাগই এখন পাকা হয়েছে। সড়ক উন্নত হওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে বেপরোয়াভাবে যানবাহন চলাচলের হারও বেড়েছে। আবার সারা দেশেই ট্রেনের সংখ্যা ও দ্রুতগতির আন্ত নগর ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে।
এটি স্পষ্ট যে, দুর্ঘটনা কখনো আগাম সংকেত দিয়ে আসে না। কিন্তু একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই এড়ানো যায় অনেক মৃত্যু, অনেক শোকাবহ পরিণতি। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এগিয়ে আসার কোন বিকল্প নেই।