রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলার ৪নং কাপ্তাই ইউনিনের দূর্গম হরিনছড়া, ভাইবোনছড়া, গাছকাটা ছড়া, পাংখোয়া পাড়া। এই ইউনিয়নের ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত এইসব পাড়ায় মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও পাংখোয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। কৃষি ও জুম চাষের উপর নির্ভরশীল এইসব এলাকার জনগোষ্ঠীরা। বিশেষ করে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১শত উপরে অবস্থিত পাংখোয়া পাড়া।
কাপ্তাই উপজেলা সদর হতে সড়ক পথে ১৫ কিঃ মিঃ পাড়ি দিয়ে কাপ্তাই জেটিঘাট হয়ে নৌ পথে কাপ্তাই হ্রদের ১৫ থেকে ২০ কিঃ মি পথ পাড়ি দিয়ে উঁচু নীচু পাহাড় মাড়িয়ে এইসব এলাকায় পৌঁছাতে হয়।
অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে এখন এইসব এলাকায় বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। বিশেষ করে যেখানে গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী ছিল সেইখানে ইজিপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কগুলো চলাচলের উপযুক্ত করা হচ্ছে। সড়কের আশপাশে জঙ্গল কেটে সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে এইসব এলাকায় প্রকল্প পরিদর্শনে যান রাঙ্গাামাটি জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ রোকনজ্জামান। এ সময় কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল হান্নান মন্ডল, ঐ ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন, কাপ্তাই প্রেস ক্লাব সভাপতি কবির হোসেনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কার্বারী এবং সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবদুল হান্নান জানান, কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ইজিপিপির আওতায় ১৪টি প্রকল্পের ৪০দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি গত ৮ জানুয়ারী হতে শুরু হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে কাপ্তাই উপজেলায় এই প্রকল্পের মোট বরাদ্দ পরিমান ৫৮লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
এই ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নের দূর্গম ৩টি ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো এই প্রকল্পের অধীনে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে। তিনি আরোও জানান, এ প্রকল্পের আওতায় এইসব এলাকায় আগে দৈনিক মজুরী ২ শত টাকা হওয়ায় কাজের লোক সংকট দেখা দিতো। বর্তমানে দৈনিক মজুরী জনপ্রতি ৪শত টাকা হওয়ায় এখন শ্রমিকের সংকট আর হচ্ছে না এবং তাদের মধ্যে কাজের আগ্রহও বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলা পিআইও দপ্তর হতে জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চলমান এই প্রকল্পের উপকারভোগীর সংখ্যা ৩ শত ৬৬জন। তৎমধ্যে ২নং রাইখালী ইউনিয়ন এর দূর্গম নারাছড়া, ডংনালা সহ ১৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে এই কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রাঙ্গামাটি জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা রোকনজ্জামান জানান, এইসব প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ সড়কের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। দৈনিক মজুরি ৪শ' টাকা হতে ৫০টাকা হারে জামানত রেখে ৩৫০টাকা এ প্রথম জিটুপি পদ্ধতিতে (সরকার টু পারসন) বিকাশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে পরিশোধ করা হচ্ছে। এখানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে নগদ টাকা লেনদেন বা কোন অনিয়মের সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দূর্গম পাহাড়ে ওই কর্মসৃজনের আওতায় এবারেই প্রথম কোন কাজ পেয়ে খুশি হতদরিদ্ররা। শ্রমিক রতিকান্ত, শ্যামল, উচিমং জানান, পাহাড়ি মেঠোপথে খুব সুন্দর ভাবে আমরা এই প্রকল্পের অধীনে কাজ করছি এবং বিকাশের মাধ্যমে আমাদের পারিশ্রমিক পাচ্ছি।
ভাইবোনছড়া, গাছকাটাছড়া, পাংখোয়া পাড়া প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য সুজন বিকাশ চাকমা, অংসাচিং মারমা ও নবীন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, এই এলাকায় বিগত বছরে আমরা এ ধরনের কাজ পাইনি। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্ররা কাজ পেয়ে খুব খুশি বলে মন্তব্য করেন এই তিন ইউপি সদস্যরা।
৪নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচীতে আগে মজুরি কম হওয়ায় দূর্গম ওয়ার্ডগুলোতে কাজের লোক খুঁজে পাওয়া যেতো না। বর্তমানে মজুরি ৪শত টাকা করায় এখন শ্রমিক সংকট হচ্ছে না। এইসব প্রকল্পের মাধ্যমে দূর্গম এই এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। এতে করে এলাকার মানুষ উপকৃত হচ্ছে।