ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে শীতের জরাজীর্ণতাকে দুরিভুত করে অপরূপ রূপে প্রকৃতিকে সাজিয়ে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। শীতের পাতাঝরা মর্মর ধ্বনিকে ছাপিয়ে গাছের ডালে ডালে ফুটেছে রঙিন ফুল আর কচি পাতার সৌরভ।
বসন্তের ছোঁয়ায় পলাশ, শিমুল, মান্দার বনরাঙা বধূর সাজে সেজে উঠেছে। আগুনরঙা ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে গাছপালা। বনে বনে ফুটেছে হাজারো রকমের বুনোফুল। সারা বছর লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা কোকিল পাখিও বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ডাকতে শুরু করে দিয়েছে কুহু কুহু সুরে। ঋতুরাজের রূপ দেখে মোহিত হয়ে নানা প্রাণীকূল মেতে উঠেছে মিলনের আনন্দে। তাইতো বসন্ত ঋতু চিরকালই কবি সাহিত্যিকদের গান, কবিতাসহ নানা রচনা লেখার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে, বসন্ত ঋতুতে প্রকৃতি বসন পাল্টায়, আগামী বছর কেমন হবে তার নাকি আঁচ পাওয়া যায় বসন্তের রূপ দেখে। বসন্ত ঋতুকে নিয়ে অনেক শল্পীরাও অনেক গান রচনা করেছেন। নিজেদের কন্ঠে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে সে গান।
বাংলায় অন্য কোন ঋতুকে ঘিরে উৎসব না থাকলেও প্রতি বছরই নানা সাংস্কৃতিক দল বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে থাকে। তবে নগরায়নের দাপটে প্রকৃতি থেকে বসন্ত তার জৌলুস দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। মানুষের প্রয়োজনে এখন যথেচ্ছাভাবে কাটা হচ্ছে নানা প্রজাতির গাছ। এসব গাছের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল, পলাশের মতো গাছও। আগরতলা শহরের বুক চিরে যাওয়া হাওড়, নদীর দুই পাড় সহ রাজ্যের প্রায় প্রতিটি এলাকায় শিমুল গাছ দেখা যেত একটা সময়, বসন্ত এলে গাছের তলা লাল হয়ে থাকতো ফুলের পাপড়িতে। ফুলের মধু খেতে আসা পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকতো সারা দিন।
কিন্তু এখন আর তেমনটি শিমুল গাছ চোখে পড়ে না। তাই চোখ ফেরালেই বসন্তের রূপ আর ততটা দেখা যায় না। তবে এখনও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে দু একটি পলাশ ও শিমুল গাছ পুরোনো দিনের নানা স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে এখনো। পরিবেশ দূষণসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশে গাছগুলো নিজেদের টিকিয়ে রেখে প্রতি বছর বসন্ত এলে জানান দেয় প্রকৃতি তার রূপ বৈচিত্র্য হারায়নি। কিন্তু যে ভাবে গাছ নিধন চলছে সেই সঙ্গে বায়ু দূষণ ও পরিবেশ দূষণের ফলে বৈরি আবহাওয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। এসবের কারণে আগামী দিনে বসন্তের ছিটে-ফোঁটাও থাকবে তো? এমনি প্রশ্ন উঠে এসেছে বিজ্ঞমহলের মাঝে। তবে বর্তমানে বসন্তের আগমণীকে আরও প্রাণবন্ত করেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে। বসন্তের প্রথম দিনে সব শ্রেণি ও পেশার লোকদের মনে করে দেয় তাদের ভালোবাসার সকল বন্ধনকে আরও মজবুত করতে। তবে এ দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে ভিন্নভাবে গ্রহণ করে আমাদের দেশের যুব সমাজ নিজেদের মূল্যবান দিকটা বিলীন করে নানা সংকট ও এ দিবসকে কলুষিত করছে তার থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তবে বসন্ত ঋতুর সব কিছুই ভালো এমনটা কিন্তু নয়। হাল্কা শীত হাল্কা গরম এই পরিবেশে অন্য সবের সঙ্গে খুব দ্রুত বিস্তার ঘটায় রোগ জীবাণুও। তাই বছরের এই সময় খুব বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা যায় সর্দিকাশি থেকে শুরু করে হাম ও বসন্তের মত অসুখের। তাই এই সময় সব বয়সী মানুষের শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। সব উৎকণ্ঠার শেষেও কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত।’