নদী হলো দেশের প্রাণ। নদী রক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। টিআর-কাবিটার টাকায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় সংযোগ খাল কাটা হচ্ছে। একটি নদীর সঙ্গে একটি খালের সংযোগ স্থাপন করার লক্ষ্যেই এই খাল খননের ব্যবস্থা। এখানে একটি খাল আগেই ছিল। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হবে নতুন একটি অংশ।
জানা যায়, নতুন এই খাল প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার খাল আগে থেকে রয়েছে। সেটি সংস্কারের পাশাপাশি প্রায় তিন কিলোমিটার নতুন খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ছয়-সাত ফুট গভীর এবং অন্তত ১৫ ফুট প্রশস্ত খালটি কাটা শুরু হয়। কিন্তু এই খাল কাটতে গিয়ে অনেক গাছ কাটা পড়ছে। অনেকের ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। এক কৃষক অভিযোগ করেছেন, তাঁর লেবুর বাগান কাটা পড়ছে খাল কাটতে গিয়ে। এক নারীর অভিযোগ, খাল যাচ্ছে তাঁর বাড়ির ভেতর দিয়ে। খাল খননের কাজ তদারকিতে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা।
বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, খাল খনন কর্মসূচির কারণে এলাকার ১৩টি গারো পরিবারসহ নিম্ন আয়ের শতাধিক পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছে। ব্যক্তিমালিকানার জমি ক্ষতিপূরণ ছাড়াই কাটা হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন আছে। এখানে কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করলে মনে হবে এলাকাবাসী এক ধরনের জবরদস্তির শিকার। অন্যদিকে অতি সম্প্রতি ব্যক্তিমালিকানায় থাকা গাছ কাটতেও অনুমতির বিধান রেখে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। সামাজিক বনায়নের যেসব গাছ রয়েছে, সেগুলোও এর আওতায় আসবে। যেখানে এ ধরনের আইন হতে যাচ্ছে, সেখানে গাছ কেটে ফসলের জমিতে খাল খনন হয় কী করে?
নদীর সাথে খালের সংযোগ সুন্দর কাজ সন্দেহ নেই। উন্নয়নমূলক কাজ। কিন্তু উন্নয়নের নামে কোনো জবরদস্তি করা যাবে না। উন্নয়ন করতে গিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবেÑএটাই প্রত্যাশা।