শীতকাল বিদায়ের পথে। তবে শীতের প্রকোপ এখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজ করছে বেশ ভালোই। জানুয়ারি মাসে ও ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিকবার শৈত্যপ্রবাহ আঘাত হেনেছে। পঞ্চগড়সহ কোনো কোনো এলাকায় তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়েছিল। এতে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঠা-াজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় হাসপাতালের মেঝেতেও রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না।
জানা যায়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক মাস ধরে চলা তীব্র শীতে ঠা-াজনিত নানা রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩২ শিশু এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১৯ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, চলতি মাসে আবারও একাধিক শৈত্যপ্রবাহ আঘাত হানতে পারে। তাতে ঠা-াজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ আরো বাড়তে পারে।
শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকেরই থাকার ভালো ঘর নেই। ভাঙা বেড়ার ঘরে শীতের কনকনে বাতাস হু হু করে ঢুকে পড়ে। তাদের গরম জামা-কাপড়েরও অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে দরিদ্র মানুষের দেহে পুষ্টির অভাব ও রক্তাল্পতা। তাদের পক্ষে শীতের এই তীব্র কামড় প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। নিকট-অতীতেও দেখা গেছে, প্রতি শীতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও শীতার্তদের মধ্যে গরম কাপড় বিতরণের অসংখ্য উদ্যোগ নেওয়া হতো। সেসব এখন অনেক কমে গেছে। এ বছর তা আরো কম দেখা গেছে। সরকারিভাবে দরিদ্র মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণের কর্মসূচিও ছিল কম। সেই সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ প্রান্তিক পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও দরিদ্র মানুষের বড় ভোগান্তির কারণ হয়েছে।
শীতকালে শৈত্যপ্রবাহ আসবে, আর গ্রীষ্মকালে আসবে তাপপ্রবাহ--এটাই প্রকৃতির নিয়ম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া ক্রমেই আরো চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠবে। শীতকালে যেমন শীতের তীব্রতা বাড়বে, তেমনি গ্রীষ্মকালেও বাড়বে গরমের তীব্রতা। বাড়বে ঝড়ঝঞ্ঝা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা আটকাতে পারব না। কিন্তু পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা যেতে পারে। আশু উদ্যোগ হিসেবে দরিদ্র ও ভাসমান মানুষের মধ্যে দ্রুত শীতবস্ত্র বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ভাসমান ও অতিদরিদ্র মানুষের জন্য সরকার স্থায়ী ও মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করবে, এবং দরিদ্র মানুষের পুষ্টিমান উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর উদ্যোগ নিবে এটাই প্রত্যাশা।