পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে প্রচ- হুমকির মুখে পরিবেশ। পচনশীল না হওয়ায় শত শত বছর ধরে এটি প্রকৃতিতে জমে থাকে। নানাভাবে পরিবেশদূষণের কারণ হয়। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। ভূমিতে তো বটেই, নদী দিয়ে ক্রমাগতভাবে সাগরে গিয়ে জমছে এই প্লাস্টিক। সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। ক্যান্সারসহ মানুষের নানা রোগব্যাধির কারণ হচ্ছে। ফলে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আয়োজন চলছে। উন্নত দেশগুলোতে অনেক ধরনের প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক সংগ্রহ করে সেগুলো রিসাইকল কিংবা ধ্বংস করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সেটি শুধু কাগজে-কলমে। পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনিসহ ১৯টি পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এসব পণ্যে এখনো ব্যাপকভাবে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও নির্ধারিত পণ্যে পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। আইন লঙ্ঘনের দায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। মূলত প্লাস্টিকের পরিবেশদূষণ বা ক্ষতি সম্পর্কে আমাদের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পাড়ার মুদি দোকান থেকে শুরু করে হাট-বাজার পর্যন্ত সর্বত্রই পলিথিনের ছড়াছড়ি। ব্যবহারের পর সেগুলো যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। সেগুলো ড্রেনে গিয়ে জমা হয়, ড্রেনে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কয়েক বছর আগে বুড়িগঙ্গায় খননকাজ চালাতে গেলে দেখা যায় এর নিচে ১০ ফুট উঁচু পলিথিনের আস্তরণ তৈরি হয়েছে। দেশব্যাপী কৃষিজমির উর্বরতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার পরও প্লাস্টিক ব্যবহারে এবং যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। কয়েক বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধিদল সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরে ঘুরে ১০ বস্তা প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়েছিল। তাতে আমরা কতটুকু সচেতন হয়েছি, তা আমাদের আশপাশে তাকালেই বোঝা যাবে। ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের এবং পাটের থলে বা বস্তা না ব্যবহারের পক্ষে অনেক অজুহাত দেখিয়ে থাকেন। তাঁদের সেই অজুহাতে কর্ণপাত করলে হবে না। যে ১৯টি পণ্যে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। একইভাবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেই সঙ্গে ডাম্পিং ও রিসাইকলিং বাড়াতে হবে। মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পলিথিন-প্লাস্টিকের বিকল্প খুব জরুরি। এসবের ব্যবহার কমাতে চাইলে বিকল্প সৃষ্টি এবং সেটি সবার হাতের নাগালে আনা ছাড়া উপায় নেই।