সকালে নাস্তা শেষ করে কাজে বের হচ্ছিলেন ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন’র ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সিদ্দিক মন্ডল। এ সময় সংবাদ আসে ছোট ভাই বাদশা কে সন্ত্রাসীরা মারপিট করছে। অন্য ভাইদের সাথে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিদ্দিক। বাবা কে অনুসরণ করে ভেড়ামারা মডেল সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আল মুজাহিদ। বাবা সিদ্দিক মন্ডল সহ আরো ৪ জন ঘটনাস্থলে পৌছার সাথে সাথেই প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা ছোড়রা বন্দুক দিয়ে গুলি চালায়। গুলিতে ঝাড়রা হয়ে যায় তাদের শরীর। এরপর আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিক কে হত্যার উদ্দ্যেশে বন্দুক তাক করেন। প্রান ভিক্ষা চেয়ে কাকুতি মিনতি করতে থাকেন তিনি। কিন্তু পাষন হৃদয় গলেনি। এরপর খুব কাছ থেকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা। বিকট শব্দের সাথে মুর্হুতেই লুটিয়ে পড়েন ওই নেতা। ছেলের চোখের সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। এ সময় চিৎকার করে বাবার কাছে ছুটে যান ছোট ছেলে মুজাহিদ। তার হাতে থাকা ছোট হাসুয়া ছুড়ে মারেন সন্ত্রাসীদের দিকে। মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে সন্ত্রাসীরা স্থান ত্যাগ করে। এ ভাবেই বাবার মৃত্যুর ঘটনা বলছিলেন নিহত আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিক মন্ডলের ছোট ছেলে মুজাহিদ। তার চোখে জ¦ল জ¦ল করছিল বেদনার অশ্রু।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাঁদগ্রাম চরপাড়া মাঠে গুলি করে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিক মন্ডল (৫০) কে। সে চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং স্থানীয় ওমর মন্ডলের পুত্র। এ সময় গুলিবৃদ্ধ হয় তার ৩ ভাই সহ ৪ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, চাঁদগ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই বংশ পরম্পরায় দ্বন্ধ চলে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় হত্যাযোজ্ঞ চলছে চাঁদগ্রামে। শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ঘুরে দেখা গেছে চারিদিকে শুনসান নিরবতা। স্থানীয়দের মাঝে চরম আতংক। মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে থাকা চরপাড়া এলাকার মালিথা বংশ এখন পুরুষশূন্য। দুই একজন মহিলা বাড়ি পাহাড়া দিলেও তাদের মাঝে আতংকের ছাপ। বাড়ির আসবাবপত্র নিয়ে তারা পালিয়ে গেছে।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিক মন্ডলের বড় ছেলে ফয়সাল রহমান বাপ্পী জানিয়েছেন, বাবাকে হত্যার ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত। তিনি জানান, আমার দাদা ওমর মন্ডলের ১০ ছেলের মধ্যে আমার বাবা ৪ নম্বার। ভোট সহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয় আমার বাবা সহ ইউনুচ এবং খালেক চাচা। আমরা আওয়ামী লীগ করি। স্থানীয় জাসদের সাথে আমাদের বিরোধ। ইউপি নির্বাচনে বিরোধ প্রকাশ্যে রুপ নেয়। জাসদ চেয়েছিল আমাদের বংশের নেতৃত্ব কে ধ্বংশ করতে। তারাই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আচমকা আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। আর চাচারা হয় গুলিবিদ্ধ। এ দিকে এ রির্পোট লিখা পর্যন্ত (বিকাল ৫টা) ভেড়ামারা থানায় কোন মামলা রেকর্ড হয়নি। গ্রেফতার হয়নি কোন আসামী। তবে অভিযান অব্যহত রয়েছে উল্লেখ করে ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০/১৫ জন কে অজ্ঞাত আসামি করে একটি এজাহার দাখিল করা হয়েছে। মামলা রেকর্ড প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।