১৯৯৭ সালে আমি ঢাকার ৯নং পাটুয়াটুলি থেকে প্রকাশিত দৈনিক সবুজ বাংলা পত্রিকায় কর্মরত ছিলাম। আওয়ামী লীগ বিটে কাজ করার সুবাদে প্রতিদিনই-২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ আওয়ামী লীগ ও অংগ সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ও পেশাজীবী সংগঠনের বিভিন্ন সভা সমাবেশে যাতায়াত ছিল আমার। ঐ সময়টায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আলহাজ্ব মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। সংবাদ সংগ্রহের ফাঁকে লক্ষ করতাম প্রতিটি সভা-সমাবেশে মঞ্চে কাছাকাছি অবস্থান করত কাজী ওমর ফারুক। মায়া ভাই সভা শেষে সাংবাদিকদের নিয়ে গল্প করতেন ও সবাইকে নিয়ে বাদাম খেতেন। ফারুকের উপস্থিতি সেখানে ছিল সব সময়। প্রায়ই মায়া ভাই ফারুক ভাইকে বলত ফারুক বাদাম নিয়ে আসো। তখনই দেখতাম একজন আন্তরিক ও বন্ধু সুলভ মানুষ ছিল ফারুক ভাই। লক্ষ করতাম সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতা ও ঘনিষ্ঠ হতে চেষ্টা করতেন সব সময়। মায়া ভাই ও ফারুক ভাইর বাড়ী চাঁদপুররের মতলবে হওয়ায় তাদের মধ্যে পূর্বেই পরিচিতি ও আলাপচারিতা ছিলো।
একদিন ফারুক ভাই আমাকে চা খাওয়ার আহ্বান জানালে চা খেতে খেতে সে সাংবাদিকতায় আশার সখের কথা জানালো এবং আমার সাথে থেকে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করল। আমিও তাকে সহযোগীতা করার আশ্বাস দিলাম। আলাপচারিতায় জানতে পারলাম ফারুক ভাই এক সময় বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত ছিল। দৈনিক সবুজ বাংলার পাশাপাশি তখন আমি ৭৮, কাকরাইল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক গর্জন নামে একটি পত্রিকায় বিকালে বসতাম। ফারুক ভাইকে একদিন সেখানে আসার আহ্বান জানালাম। যথারীতি আসলেনও ফারুক ভাই। তার কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে ফারুক ভাইকে আমি ফটো সাংবাদিকতার আসার আহ্বান জানালাম। ফারুক ভাই রাজী হল। সম্পাদক তাতে নিয়োগের সব ব্যবস্থা করে দিলাম। বিকালে ফারুক ভাই অফিসে সকলকে মিষ্টি খাইয়ে শরু করল তার ফটো সাংবাদিকতার জীবন। এভাবে প্রায় সাপ্তাহিক গর্জনে ১ বছর কাজ করল ফারুক ভাই। তার পরে আমি দৈনিক প্রভাতে কাজ করার সুবাদে কাজী ওমর ফারুক ভাইকেও ফটো সাংবাদিক হিসেবে দৈনিক প্রভাতে কাজ করার সুযোগ করে দিলাম। আমাদের দুজনের মধ্যে খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ফারুক ভাই ছিল একজন সহজ সরল মানুষ। মানুষের জন্য কাজ করতে তার ভাল লাগত। দৈনিক প্রভাতের পর আমরা দুজনে একসাথেই সাপ্তাহিক অপরাধ চিত্র, অপরাধজগতসহ বিভিন্ন অপরাধ বিষয় ম্যাগাজিনে কাজ করেছি। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য ছুটে গেছি দর থেকে দুরান্তে। কাজী ওমর ফারুকের বাসা ছিল ফুলবাড়ীয়া রেলওয়ে কলোনীতে। প্রায়ই তার বাসায় যাওয়া আসা ছিল আমার। গুলিস্তান, ফুলবাড়ীয়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও ফুলবাড়ীয়া বাসস্টান্ডের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই সংবাদ লিখতেন ফারুক ভাই। তার লেখায় শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ কষ্ট ভেষে উঠত। ফারুক ভাই ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল অনেক বিনয়ী ও মানবিক। কাজী ওমর ফারুক দৈনিক আমার বার্তা ও সর্বশেষ ধৈনিক তরুণ কণ্ঠে কাজ করেছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)’র সিনিয়র সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফারুক ভাই ১ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক।
আমি যতদুর দেখেছি কাজী ওমফ ফারুক ভাই ছিলেন একজন সংগঠনপ্রিয় মানুষ। নিজে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র নির্বাচনে সব সময় সরব ভূমিকা পালন করেছেন। ফারুক ভাইকে দেখেছি সব সময় ইতিবাচক চিন্তা ভবনা করতে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্তর, ইউনিয়ন অফিসসহ যেখানেই সংবাদকর্মীদের আড্ডা হত সেখানেই ফারুক ভাইর সব সময় উপস্থিত ছিল লক্ষনীয়। শত দুঃখ ও কষ্টের মাঝে মুখে হাসি লেগেই থাকত। রুর্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন (আরজেএফ) আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিজ থেকেই অংশগ্রহণ করতেন ফারুক ভাই।
ফারুক ভাই চলে যাওয়ার মাত্র ১দিন আগে সন্ধ্যায় পুরানা পল্টন মোড়ে আমার সাথে দেখা। আমাকে বলল, মেয়ের বাসায় বসুন্ধরা যাবো। ফোন বুক থেকে মেয়ের নাম্বারটা বের করে দিতে বলল। বাংলায় সেইভ করা বলে আমি চেষ্টা করেও পারলাম না। সেই আমার সাথে তার শেষ কথা। ১৬ ফেব্রুয়ারি ১১টায় ডিইউজের সিনিয়র সদস্য ও প্রবীণ ও কর্মাহত সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিকদার আব্দুস সালাম ভাই আরজেএফ’র অফিসে এসে জানাল ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় কাজী ওমর ফারুক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মুহুর্তেই স্তব্দ হয়ে যাই। নিয়তির খেলা, মেনে নিতেই হচ্ছে কষ্টের হলেও। শুধু দোয়া করি ওপারে ভাল থাকবেন কাজী ওমর ফারুক ভাই। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ফারুক ভাইকে ঘিরে আমার সাংবাদিকতা ও ব্যক্তিগত জীবনে অনেক স্মৃতি। তার কাছে গুলিস্তান, ফুলবাড়ীয়া এলাকার অনেক অপরাধ বিষয়ক ও আন্ডারওয়াল্ডের খবরাখবরও ছিল। এসব নিয়ে রিপোর্টং করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন ও রাঘব বোয়ালদের রোষানলে পড়েছেন তিনি। ফারুক ভাইর সকল কর্ম ও স্মৃতি আমাদের মাঝে রেখে গেছেন। আর কোনদিন আমাদের কছে ফিরে আসবে না। আমার সহকর্মী সকলের প্রতি আবেদন ফারুক ভাইর জন্য সকলে মনভরে দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।
লেখক: এস এম জহিরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, রুর্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন (আরজেএফ)