তিথির ফোন এলো তিন দিন পর। রাহাত ফোন রিসিভ করতেই তিথির তীক্ষ্ণ কণ্ঠ শুনতে পেলো, 'তুমি হলে একটা শীতালু।'
রাহাত হেসে বললো, 'শীতালু আবার কি?'
-- 'শীতালু মানে শীতের আলু। তুমি শীতের আলুর মতোই গর্তের ভেতর ঢুকে থাকো। তোমার মধ্যে কোন রোম্যান্টিকতা নেই। তুমি-- তুমি একটা শীতল প্রাণী।'
-- 'শীতের সাথে আমার কোন সখ্য নেই প্রিয়। আমি নাতিশীতোষ্ণ প্রাণী। না শীত, না গরম। আমি বসন্ত ভালবাসি।'
-- 'বসন্তকে ভালোবাসার মধ্যে কোন গৌরব নেই বুঝলে।'
-- 'শীতকে ভালোবাসার মধ্যেই বা গৌরব কোথায়?'
-- 'শীতকে ভালোবেসে তার মধ্যে প্রাণের স্পন্দন জাগানটাই হলো গৌরবের। আচ্ছা তোমার সাথে এত কথা বলছি কেনো? তুমি বাসা থেকে বের হও এখনি। আমি ধানম-ি লেকে বসে আছি। রবীন্দ্র সরবোরে।'
তিন দিন আগেও তিথি রবীন্দ্র সরবোরে এসে রাহাতকে ফোন দিয়েছিল। রাহাত দেখা করেনি। তার পকেট শূন্য। শূন্য পকেটে প্রেমিকার দেখা করা যায় না। কিন্তু আজকে আর না করতে পারলো না। শূন্য পকেটেই বেরিয়ে পড়লো।
তিথি আজ সবুজ রঙের একটা শাড়ি পরে এসেছে। তাকে দেখতে ধানক্ষেতের মতো সুন্দর লাগছে। রাহাত কথাটা বলেও বলতে পারলো না। ধানক্ষেতের কথা শুনে তিথি রাগ করতে পারে। সে মনে মনে ভিন্ন উপমা খুজতে লাগলো।
তিথি আজ বেশ উৎফুল্ল। অন্যদিনের তুলনায় আজকে কথাও বলছে বেশি। হাসছে অকারণ। রাহাতকে একসময় প্রশ্ন করলো, 'অ্যাই এটার নাম রবীন্দ্র সরোবর হইছে ক্যান?'
রাহাত বললো, 'রবীন্দ্রনাথ এখানে একদিন স্নান করেছিলেন। তাই এটার নাম হইছে রবীন্দ্র সরোবর।'
তিথি হাসতে লাগলো উচ্চস্বরে। যেন বিরাট মজার কোন কথা শুনেছে।
সময়টা বেশ কেটে গেলো দু’জনের। ফেরার সময় তিথি বললো, 'রাহাত আমার বিয়ে ঠিক হইছে। এক সপ্তাহ পরই বিয়ে।'
রাহাত বললো, 'বাহ! কনগ্রাচুলেশন।'
তিথির চোখ দিয়ে জল গড়ে পড়লো টুপ করে। রাহাত অবাক হলো। মেয়েটাকে বোঝা মুশকিল। এই হাসছিল কেমন হেমন্তের আকাশের মতো। এই আবার কাঁদতে লাগলো। সে কিছু বলার আগেই তিথি তাকে একা ফেলে হাঁটতে লাগলো।
রাহাত ডেকে বললো, 'অ্যাই তিথি আমার পকেটে টাকা নেই। রিক্সাভাড়া দিয়ে যাও। হেঁটে এসেছি। এখন আর হাঁটতে পারবো না।'
তিথি ফিরে এসে রাহাতের হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললো, 'আর কখনো আমাকে ফোন দিবে না।'
রাহাত বললো, 'তোমার বিয়ের দাওয়াত পাবো না?'
তিথি এবার দুম করে রাহাতের গায়ে কিল মেরে চলে গেলো। রাহাত তাকে আর ফোন দিলো না। তিন দিন পর রাহাতের মোবাইলে তিথির ফোন এলো আবার। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তিথির সেই তীক্ষ্ণ কণ্ঠ শোনা গেলো, 'অ্যাই গাধা এতোদিন ফোন দাওনি ক্যান??'