ইসলাম হচ্ছে একটি প্রগতিশীল ও শান্তির ধর্ম। যেখানে অবাঞ্ছিত সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ এর মত নেতিবাচক বিষয় একেবারেই পরিত্যাজ্য। ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি কোন প্রকার কটাক্ষকে কস্মিনকালেও সমর্থন করে না। কেননা আল্লাহর প্রিয় নবী (দঃ) জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে তাবৎ দুনিয়ার কল্যাণ স্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। যিনি ঐতিহাসিক মদিনা সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে ইহুদি, পৌত্তলিক, খ্রীস্টান ও মুসলমানদের নিয়ে মদিনাতে একটি স্বাধীন-স্বতন্ত্র জাঁতি ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ব ইতিহাসে অসাম্প্রদায়িকতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। অথচ দূঃখজনক হলেও সত্য যে, একটি কুচক্রীমহল মুসলমানদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তথা জঙ্গি তকমা দিয়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি হিসেবে চিত্রিত করতে চায়। ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর সভাপতি পীরে কামেল আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী উপর্যুক্ত কথা বলেন।
শনিবার সকালে রমনা ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর সভাপতি পীরে কামেল আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী এর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় পরিষদের ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন ও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত মহাসচিব আল্লামা শায়খ খোন্দকার গোলাম মাওলা, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর গর্ভনর ড. আল্লামা কফিল উদ্দিন সরকার সালেহী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডঃ আব্দুল্লাহ আল মারুফ, বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন ও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল এর আহ্বায়ক আল্লামা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী, আল্লামা মোশাররফ হোসাইন হেলালী ও আল্লামা মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদী, মাওলানা জাকির হোসাইন, পীরজাদা নাজমুল হক আখন্দ, মুফতি জহিরুল ইসলাম ফরিদী, এড, শাহিদুল আলম রিজভী, মাওলানা মুফতি আবুল হাশেম শাহ্ মিয়াজী, মাওলানা মো. আল-আমিন দেওয়ান আল-আবেদী প্রমূখ।
এ সময় অন্যন্যের মাঝে আল্লামা অধ্যক্ষ এস এম ফরিদ উদ্দীন, আল্লামা কাজী জসিম উদ্দিন, এম সোলায়মান ফরিদ, স ম হামেদ হোসাইন, আলহাজ¦ এইচ এম মুজিবুল হক শাকুর, হাসানুর রহমান হোসাইন নক্সবন্দী, অধ্যক্ষ এম ইব্রাহীম আখতারী, খান এ সবুর, মাওলানা জাকের আহমদ সিদ্দিকী, অধ্যাপক ছৈয়দ হাফেজ আহমদ, আলহাজ¦ মাওলানা এ এম মঈন উদ্দীন চৌধুরী হালিম, মুফতি মাওলানা নিজাম উদ্দীন নোমানী, নাইম উদ্দীন, মাওলানা হেলাল উদ্দীন আলকাদেরী, মাওলানা শামসুদ্দোহা, এম এম নাঈম উদ্দীন, গোলাম হায়দার হাসিব, ফরিদ মজুমদার, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শের বিভিন্ন দরবার শরীফের পীর মাশায়েখ, হক্কানী ওলামায়ে কেরামসহ হাজার হাজার সুন্নী জনতা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে আল্লামা শায়খ খোন্দকার গোলাম মাওলা বলেন- ইসলামে শ্বাশত মর্মবাণীর সঠিকতা নিরূপণে অনেকেই ব্যর্থ হয়ে মুসলিম কমিউনিটিতে অনৈক্য-বিভক্তি ও বিভাজনকে জিইয়ে রেখেছে। যে কারণে ধর্মানুরাগী মানুষের একটি অংশ ক্রমাগত ভ্রষ্টতার দিকে ধাবিত হয়ে জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন গর্হিত কাজে লিপ্ত হচ্ছে।
ডঃ আল্লামা কফিল উদ্দীন সরকার সালেহী বলেন- ইসলামে পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এমন কতিপয় গর্হিত কাজকে পূণ্য হিসেবে মনে করছে। উপরন্তু ক্রমাগত বিভিন্ন মাজহাবি ফেতনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করে বলেন- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতই ইসলামের মূলধারা। যেটি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে জাতীয় জীবনে একটি মেধাবী, দক্ষ ও আদর্শিক প্রজন্ম গঠনে অহর্নিশ কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে।
অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর বলেন- সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব শান্তির অন্তরায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এটিকে থামানো না গেলে ক্রমাগত অস্থির হয়ে উঠবে তাবৎ বিশ্ব। সংঘাত ও হানাহানি ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। এমনকি যার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাংলাদেশও কোনভাবেই মুক্ত থাকবে না। তাই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহকে দায়িত্বশীল ভূমিকায় এগিয়ে আসার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণেরও উদাত্ত আহবান জানান।
ডঃ আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন- বিশ্বের দেশে দেশে মুসলমানরা নির্যাতিত ও নিগৃহীত। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, মিয়ানমার, ফিলিস্তিন, ভারত ও কাস্মীরসহ প্রায় প্রতিটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ সমূহতে অব্যাহতভাবে চলমান রয়েছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। তাই মুসলমানদের সুরক্ষায় আরব লীগ ও আই সিকে বলিষ্ট পদক্ষেপে এগিয়ে আসার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
আল্লামা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী বলেন- নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণ ভোক্তা শ্রেণীর দুর্ভোগ-ভোগান্তির কোন অন্ত নেই। জনশ্রুতি আছে একটি অসাধু ব্যবসায়ী দুষ্টচক্র অধিক মুনাফার লোভে সিন্ডিকেট তৈরী করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এতে সরকার দলীয় অনেকেরই জড়িত থাকার গুঞ্জনও শোনা যায়। যাদের নেপথ্য কারসাজিতে পণ্যমূল্য স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। এহেন অনিয়ন্ত্রিত পণ্যমূল্য রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দূর্বল চিত্রের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন- জনস্বার্থে অবিলম্বে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া সংকট সৃষ্টিকারী ওই চিহ্নিত দুষ্টচক্রকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্যও জোর দাবী জানানো হয়।
পরে আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ্ মোজাদ্দেদীকে চেয়ারম্যান, আল্লামা শায়খ খোন্দকার গোলাম মাওলা, অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর, গর্ভনর ড. আল্লামা কফিল উদ্দিন সরকার সালেহীকে কো-চেয়ারম্যান, ডঃ আল্লামা আব্দুল্লাহ আল মারুফকে মহাসচিব, আল্লামা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরীকে নির্বাহী মহাসচিব ও আল্লামা মুফতি মো. আলাউদ্দিন জেহাদীকে সাংগঠনিক সচিব করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।