নিরাপদ প্রসবে গর্ভবতী মায়েদের আস্তায় পরিনত হয়েছে বান্দরবানের লামা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চলতি বছরের প্রথম দু’মাসে ৫৫টি নরমাল এবং ৭টি সফল সিজারিয়ান অপারশনের মাধ্যমে ডেলিভারী সম্পন্ন হয় এখানে। এছাড়া, গত ৪ মার্চ একদিনে সফল অস্ত্র পচারের মাধ্যমে ৪ নবজাতকের জন্ম হয় হাসপাতালটিতে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সেবায় একের পর এক সফল ডেলিভারীর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় প্রসবকালীন ঝুঁকি এড়াতে নিরাপদ মনে করে লামা হাসপাতালমুখী হচ্ছেন গর্ভবতী মায়েরা।
সূত্র জানায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট লামা উপজেলা হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ লোকবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত হয়ে আসছিলো। সাধারণ ছোটখাট অপারেশনের জন্য রুগীদের যেতে হতো অন্যত্র। সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগ সৃষ্টি হত প্রসূতি সেবার ক্ষেত্রে। সংকটকালিন সময়ে হাসপাতালে আসলেই তাদেরকে অন্যত্র রেফার করা হতো। এ সময় চকরিয়া, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালে গিয়ে ডেলিভারী সম্পন্ন করতে হত। এর ফলে মা ও নব জাতকের জীবন ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠতো। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর অপারেশন থিয়েটার তৈরি হলেও পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ লোকবলের অভাবে অপারেশন থিয়েটারটি চালু হচ্ছিলোনা। সম্প্রতি হাসপাতালটিতে যোগ দিয়েছেন পর্যাপ্ত সংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক। সাথে রয়েছে দক্ষ, প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফ। যার ফলে সকল সংকট কাটিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এলাকার প্রসুতি মায়েদের কথা চিন্তা করে অপারেশন থিয়েটারটিকে সচল করে তোলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, গাইনী বিশেষজ্ঞ, এনেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট, অভিজ্ঞ নার্স ও প্রশিক্ষত মিডওয়াইফের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় একটি বিশেষ টিম। তাদের নেতৃত্বেই এখন সম্পন্ন হচ্ছে একের পর এক সফল ডেলিভারী।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে নরমাল ডেলিভারী হয় ২৬টি ও সিজারিয়ান ডেলিভারি হয় ৩টি। ফেব্রুয়ারী মাসে নরমাল ২৯টি ও সিজারিয়ান ডেলিভারি হয় ৪টি। সর্বশেষ ৪ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সার্বিক নির্দেশনায় ৪ জন গর্ভবর্তী মায়ের সফল সিজারিয়ান ডেলিভারি সম্পন্ন হয়। প্রসূতি মায়েরা হলেন- লামা পৌরসভার বাজার পাড়ার মিনা বড়-য়া, কলেজ গেইট পাড়ার আমেনা বেগম, পার্শ্ববর্তী চকরিয়া বমুবিলছড়ি এলাকার রাজিয়া বেগম (২৮) ও বমুরকুল পাড়ার মাজেদা আক্তার (২৮)। ডেলিভারি অপারেশন পরিচালনায় ছিলেন- গাইনী কনসালটেন্ট ডা. মাকসুদা বেগম, এনেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট ডা. নূর মুহাম্মদ, সহাকারী সার্জন ডা. আতিয়া সুলতানা লাকি, সিনিয়র নার্স ইখেনুু মার্মা সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মিডওয়াইফ নার্স শাহিনা বেগম, ইখেনু, জান্নাতুল ফেরদৌস, রেবেকা পারভিন, আরজিনা ও মিজবা।
প্রসুতি আমেনা বেগমের স্বামি আবদুর রহিম জানান, তার প্রথম সন্তান বাড়িতে অদক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে ডেলিভারী করা হয়। ডেলিভারীর কিছু সময় পরে তার সন্তান মারা যায়। লামা হাসপাতালে সফলভাবে বিনা খরচে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে তার স্ত্রীর ডেলিভারী সম্পন্ন হওয়া সে খুবই আনন্দিত। তার স্ত্রী এবং সন্তান সুস্থ্য আছে। প্রসূতি রাজিয়া বেগম জানান, তৎসময়ে লামা হাসপাতালে ব্যবস্থা না থাকায় পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে তার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম হয়। সেখানে তার ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে এলাকার সরকারী হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে নিরাপদে সন্তান জন্ম দিতে পেরে ডাক্তার ও নার্সসহ সকলের নিকট কৃতজ্ঞ।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মইনুদ্দীন মোর্শেদ বলেন, নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না হওয়ায় প্রসূতির স্বজনদের সম্মতিক্রমে আমরা সিজারের ব্যবস্থা করি। গত ৫ মার্চ একদিনেই ৪জন গর্ভবতী মায়ের সফলভাবে সিজার সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৫ মার্চ পর্যন্ত ৮২ জন নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারি আমরা সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে প্রসূতি মায়েদের জন্য এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
লামা উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী জনপদের গর্ভবতী মায়েরা একসময় নিজেদের অজ্ঞতা, ও ধর্মান্ধতার কারণে অদক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে নিজ বাড়িতেই সন্তান প্রসবের ঝুঁকি নিতেন। লামা হাসপাতালে সম্পন্ন হওয়া একের পর এক সফল ডেলিভারীগুলো গর্ভবতী মায়েদের মাঝে আস্তার সৃষ্টি করেছে। তারা নিজ বাড়ির পরিবর্তে এখন হাসপাতালকেই নিরাপদ মনে করছেন।