বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর গান, বাউল মেলা ও সাধুসংঘের মধ্য দিয়ে আজ কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব ২০২২।
আজ ১৫ মার্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন আলোচনায় প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন,এনডিসি। ১৬মার্চ বুধবার দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মানীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ১৭মার্চ বৃহস্প্রতিবার আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কুষ্টিয়া-৩(সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফ। তিন দিনের এই আলোচনা সভায় সভাপত্বিত করবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক(ডিসি) ও লালন একাডেমির সভাপতি মোঃ সাইদুল ইসলাম।
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর গান, বাউল মেলা ও সাধুসংঘ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ভক্ত অনুসারীরা আগে থেকেই লালন আখড়ায় জায়গা করে নিয়েছে। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মাজার প্রাঙ্গণ ধুয়ে মুছে এক বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
মরমী এ সঙ্গীত সাধকের বার্ষিক স্মরণোৎসব উপলক্ষে তার সাধন-ভজনের তীর্থস্থান কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছে উৎসবের পল্লীতে।
দেশ-বিদেশ থেকে আগমন ঘটেছে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজনসহ অসংখ্য মানুষের। উৎসব ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় শুরুর পর চলবে ১৭ মার্চ পর্যন্ত।
প্রতিদিন সন্ধ্যা পর থেকে স্মরণোৎসবে থাকবে লালনের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণসহ আলোচনা, লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান ও লালন গ্রামীণ মেলা।
কুষ্টিয়া শহরের কোল ঘেঁষে কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদী, এ নদীর তীরেই ছেউড়িয়া। সেখানেই রয়েছে লালনের সমাধি।
বাংলা ১২৯৭ পহেলা কার্তিক ও ইংরেজি ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে এখানেই মরমী সাধক লালন শাহের শেষশয্যা রচিত হয়। গবেষকদের মতে, বাউল সাধক ফকির লালন শাহর জীবদ্দশায় দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোলপূর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো সাধুসংঘ। লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমি প্রতিবছর এ উৎসবটিকে লালন স্মরণোৎসব হিসাবে পালন করে আসছে।তবে ২০২০সালের পর থেকে টানা দুই বছর মহামারী করোনা কারণে সরকারী নিষেধাজ্ঞায় আখড়া বাড়িতে ছিল না কোন উৎসব।
লালন অনুসারীরা দিনটিকে দোলপূর্ণিমা উৎসব হিসাবেই পালন করে থাকেন। সাধুদের মতে, সত্যিকার অর্থে লালন অনুসারীরা দোলপূর্ণিমার এ রাতটির জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপূর্ণিমার রাতের বিকেলে ছেঁউড়িয়ার অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোলসঙ্গ শুরু হয়। চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নার ছটায় আর মাতাল হাওয়ায় গানে গানে বাউল সাধকরা হারিয়ে যায় ভিন্ন কোনো জগতে। পরের দিন চারটায় পূর্নসেবা দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়াবাড়ি ত্যাগ করেন বেশির ভাগ সাধু। প্রকৃত সাধুসঙ্গের অধিবাস শেষ হলেও লালন একাডেমি আয়োজিত মূলমঞ্চে লালনগীতি ও লালনমেলা। ভক্তরা মনে করেন, মানবধর্মই বড় ধর্ম। একসাথে এভাবে সাধুসঙ্গ করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধু-গুরুর কৃপা ছাড়া মানুষ মুক্তি পেতে পারে না। তার কৃপায় মানুষ সঠিক পথ দেখে। লালন স্মরণোৎসব ঘিরে কালীগঙ্গা নদীর ধারে বসেছে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল গ্রামীণ মেলা। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারে আরও বেশী সমাগম ঘটবে লালন ভক্ত অনুসারীদের। আর এ উৎসবকে নির্বিঘœ রাখতে কয়েক বলয়ে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়া পুলিশ প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে সুষ্ঠুভাবে তিনদিনের এই অনুষ্ঠান সম্পন্নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।