মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে আপেল বেগুন ও ডাব বেগুনের সফল চাষ হয়েছে। হয়েছে বাম্পার উৎপাদনও। ময়মনসিংহ থেকে আনা বীজ দিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ১২টি প্রদর্শনী প্লটে এ বেগুনের সফল চাষ হয়েছে। উৎপাদিত এ বেগুন সম্পূর্ণ নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও বিষমুক্ত।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি ময়মনসিংহ থেকে ডাব ও আপেল জাতের বীজ সংগ্রহ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোণ, সিন্দুরখাঁন, সাতগাঁও ও মির্জাপুর ইউনিয়নে ৩টি করে ১২টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করেন। ২০শতকের একেকটি প্রদর্শনী প্লটে কৃষি অফিস থেকে বীজ, জৈব সার, বালাই ব্যবস্থাপনার জন্য সেক্স ফেরোমন, হলুদ ট্র্যাপ বেগুন চাষিদের সরবরাহ করা হয়। ১২টি প্রদর্শনী প্লটের মধ্যে ৬টি ডাব জাতের বেগুন ও ৬টি আপেল জাতের বেগুনের প্রদর্শনী প্লট রয়েছে।
তিনি আরও জানান, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের জন্য সেক্ ফেরোমন, হলুদ ট্র্যাপ এবং ইকোম্যাক নামজ জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়নি। প্রদর্শনী প্লটে জৈব সার হিসেবে ভার্মি কম্পোস্ট (কেচু সার) ব্যবহার করা হয়েছে। সেজন্য এই বেগুন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও বিষমুক্ত।
সূত্র জানায়, এ বেগুনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ বেগুন আকারে বড়, দৃষ্টি নন্দন, দেখতে সুন্দর এবং উচ্চ ফলনশীল জাত বিধায় কৃষক এ বেগুন থেকে বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার খলিলপুর গ্রামের বেগুন চাষি মুহিবুর রহমান জানান, গত নভেম্বর মাসে তিনি ২০ শতকের প্লটে ডাব জাতের বেগুন চাষ শুরু করেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কর্মকর্তারা নিয়মিত আমার বেগুনের প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন ও দেখভাল করেছেন। ২০ শতকের এ প্লটে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। মুহিবুর আরও জানান, তিনি এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ কেজি বেগুন ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। আগামী রমজান মাসে তিনি আরও ২ হাজার কেজি বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। এতে তার আরও ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হবে। মুহিবুর বলেন, তার প্লটে উৎপাদিত একেকটি বেগুনের ওজন ৭০০ থেকে ১০০০ গ্রাম। তার প্রদর্শনী প্লট দেখে অন্যান্য চাষীরাও এ জাতের বেগুন চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং তার কাছে বীজও চেয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, তিনি ময়মনসিংহ থেকে বীজ নিয়ে এসে শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো এ জাতের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করেন এবং এতে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এ বেগুনটি আপেলের মতো দেখতে গোল, রোগ বালাই কম, পোকামাকড় থাকেনা। তাই সবাই এটি পছন্দ করে। খেতেও ভালো। বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশি। আগামী মৌসুমে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সব ইউনিয়নে এ জাতের বেগুন চাষ ছড়িয়ে দিবেন বলে তিনি জানান।