খরা, অনাবৃষ্টি আর একসময় মঙ্গা পীড়িত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ। বিগত কয়েক বছর থেকে দারিদ্র বিমোচন,খরা মোকাবেলায় কৃষকের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় সেচ কার্যক্রম কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ায় কৃষিক্ষেত্রে এসেছে বিপ্লবিক পরিবর্তন। মাতৃরূপী ব্যারেজ প্রকল্প মঙ্গা, খরা, দারিদ্র্যের অপবাদ দূরীভূত করে এনেছে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের ব্যাপক উন্নয়ন। চৈত্রের খরতাপে বর্ষা রূপে ফুঁসে উঠেছে সেচ ক্যানেলের পানি। টইটুম্বুর পানির প্রবাহ দিয়ে চলছে বোরোসহ বিভিন্ন আবাদের মহা কর্মযজ্ঞ। দেখা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার ক্যানেলে পানি উপচে পড়ছে। উজান থেকে ভাটিতে হুহু করে নেমে আসা পানি মূল ক্যানেল থেকে টারসিয়ারী, সেকেন্ডারি ক্যানেলের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে কৃষকের ফসলের মাঠে। শুষ্ক মৌসুমে এমন নিরবিচ্ছিন্ন থৈ-থৈ করা সেচ সুবিধা পেয়ে প্রতিবছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে চলছে বোরো চাষাবাদ। স্বল্প খরচে, উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। নিবিড় পরিচর্যা আর সবুজের আলপনায় চলতি বছরও ভাল ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
প্রকল্প এলাকার কৃষকরা জানান,বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার সেচ ব্যবস্থার বেগবান, কৃষি প্রণোদনা, স্বল্পমূল্যের পানি, র্ভতুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ, ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়ে সবাই এখন পাকা বাড়ি, গাড়ির মালিক। সদর ইউপি’র বাজেডুমুরিয়া ক্যানেল পাড়ের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, মাটির কুয়া, ঢেঁকিকল, সেউতির মাধ্যমে সেচ দিয়ে বিঘা প্রতি ধান পেত ১০ থেকে ১২ মন। তাছাড়াও অধিকাংশ জমি সেচের অভাবে পড়ে থাকত। এখন সহজে পানি পেয়ে শতভাগ জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। শ্যালো মেশিনে খরচ পড়তো হাজার দুয়েক টাকা। এখন বিঘায় খরচ হচ্ছে ১৬০টাকা। একরে ৪৮০টাকা। ফলন হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০মন। মৎস্য, পশুপালন, বনায়ন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। টি ফাইফটি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি হোসেন মোঃ সাদিকুল ইসলাম বলেন, তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প না হলে প্রচন্ড দাবদাহে এ অঞ্চল মরুভ’মিতে পরিণত হত। এ সেচে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনছে। কৃষকের পাশাপাশি আগের অভাবি বর্গাচাষীরাও এখন সচ্ছল।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী শামীম বলেন, নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলায় প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।